নিউজ ডেস্ক:
ডলার সংকট, আমদানিতে বাধা, অর্ডার কম, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার মধ্যেও সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে রেকর্ড ৫৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এবং আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। যদিও বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি আয় ছিল ৫২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এই অর্জনকে ইতিবাচক উল্লেখ করে রপ্তানিকারকরা বলছেন, লোকসান দিয়েও রপ্তানির ধারা অব্যাহত রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় পণ্যমূল্যেও বেড়ে গেছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ও বেড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসের ধারবাহিকতায় জুনেও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব অব্যাহত ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে ৫৩১ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে।
গেল অর্বছরে ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক ২১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর নিট পোশাক ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
রপ্তানিকারক শিল্প মালিকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, এই সংকটকালে রপ্তানির যে প্রবৃদ্ধি তা আশাব্যঞ্জক। আমরা এতটা আশা করিনি। শিল্প মালিকরা লোকসান দিয়েও রপ্তানির ধারা অব্যাহত রেখেছেন। বৈশ্বিক সংকট চলছে। এর মধ্য দিয়ে রপ্তানিতে রেকর্ড, এটি অবশ্যই ভালো খবর। তবে সামনের দিনে শিল্প কারখানাগুলো কীভাবে টিকে থাকবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
অন্যদিকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আমাদের সময়কে বলেন, অর্ডার অনেক কম। ধারদেনা করে শিল্প-কারখানাগুলো চলছে। রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশ ইউরোপের বাজারে যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ^ অর্থনীতি বিপর্যস্ত করেছে। বর্তমানে অর্ডার নেই। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানির এই ধারা কতটা অব্যাহত ধাকবে সেটাই দেখার বিষয়। তবে রপ্তানির ধারা আশাব্যঞ্জক, যা রপ্তানিকারকদের আশার আলো দেখাচ্ছে।
এদিকে রপ্তানি আয়ের মূল হাতিয়ার পোশাক খাত তার ধারা অব্যাহত রেখেছে। মূলত পোশাকের ওপরই নির্ভর করে রপ্তানি আয়ের পরিস্থিতি।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমাদের সময়কে বলেন, এখনো অর্ডার কম। বর্তমানে বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এ দুর্দিনেও রপ্তানির চিত্র রপ্তানিকারকদের আশা জুগিয়েছে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফুটওয়্যারে ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, ম্যান মেইড ফিলমেন্ট ও স্ট্যাপল ফাইবারে ৪২ দশমিক ৯৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে কৃষি পণ্যে ২৭ দশমিক ৪৭ ও হিমায়িত মাছে ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পাটজাত পণ্যে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ নেতিবাচক ধারায় রয়েছে।