নিউজ ডেস্ক:
ষড়যন্ত্রকারীরা আজ দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের পক্ষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমাদের সময়ে তাদের শরীরে সঞ্চিত চর্বি তারা আজ আমাদের বিরুদ্ধেই ‘বার্ন’ করছে। তারা বাংলাদেশে একটা কিছু করতে চায়। তারা খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মা। একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঠিক আগের দিনও মোশতাকের ভূমিকা উন্মোচিত হয়নি। কিন্তু আজ তাদের কারো কারো ষড়যন্ত্র আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে।
আমরা লক্ষ করছি, গত কয়েক মাস ধরে দেশি-বিদেশি কিছু ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর থেকেই তারা এই ষড়যন্ত্র করে আসছে। আল্লাহর অশেষ রহমত আর বাংলাদেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন আর ভালোবাসা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাদের প্রতিটি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছেন। এক একটি বৈদেশিক ঘটনাকে সামনে রেখে তারা নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। গত এক দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে যতবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে, ততবার তারা বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেছে আর ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে।
করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যখন মানসিকভাবে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ছিল এবং এই ধরনের মানসিক চাপ যখন বাংলাদেশের অনেক মানুষের মধ্যে বিরাজমান ছিল, আর রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সরকার যখন এদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য দিন-রাত কষ্ট আর প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে এই চক্রটি তথাকথিত ‘সরকার পরিবর্তনের’ ঘৃণ্যতম ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মহামারির কারণে ইউরোপের দুটি দেশে যখন ক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যম জাতীয় নির্বাচন স্থগিত করা হয় এবং সেটি যখন সবাই মেনে নেয়, ওই সময়ে বাংলাদেশে সাংবিধানিক সরকারের মেয়াদ সাড়ে তিন বছর বাকি থাকতেই অসাংবিধানিকভাবে সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের আলামত আমরা লক্ষ করেছিলাম।
সারা বিশ্বেই পেনডেমিকের সময় বিরোধীদলসহ রাষ্ট্রের সকল স্টেকহোল্ডার জাতীয় স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করে। এটাই আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি । কারণ এই ধরনের সময়ে রাষ্ট্রকে অনেক দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জাতীয় স্বার্থে অনেক সিদ্ধান্ত প্রচলিত ও সনাতনি পদ্ধতির বাইরে বিশেষ ব্যবস্থায় নিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখলাম অন্য রকম চিত্র। একটি কুচক্রী মহল নিজেরা নিরাপদ অবস্থানে থেকে সতেরো কোটি মানুষের জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে নিয়োজিত শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে গভীর ষড়যন্ত্র করেছিল। এরা জাতীয় শত্রু, এরা রাষ্ট্রদ্রোহী।
২০১১ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর তারা ক্যাপিটাল হিল, স্টেট ডিপার্টমেনট, বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে লবিইস্টদের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে তাদের ষড়যন্ত্রের পক্ষে কোনো ফল না পেয়ে হতাশ হয়েছে। এই অর্থের উৎস হচ্ছে বিদেশে পাচারকৃত বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিদেশে লবিইস্টদের বাংলাদেশবিরোধী এই সকল অপতৎপরতা ভেস্তে যায়। বিগত কয়েক বছর থেকে অর্থ পাচারের অপরাধ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মহল বেশ তৎপর থাকার কারণে তারা মোটা অংকের টাকা লবিইস্টদের পেছনে খরচ করতে পারছে না। এছাড়া, বাংলাদেশ বিষয়ে এক দশকেরও বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হওয়ায় লবিইস্টদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ফল আসছিল না। গত এক দশকে লবিইস্টদের মাধ্যমে কোনো সুফল না পাওয়ায় অর্থ জোগানদাতারাও নতুন করে অর্থ দিতে নারাজ; যদিও এই অর্থ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ যা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন পাচার করেছিল। এই সকল কারণে এই চক্রটি আর অতীতের মতো লবিইস্টদের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারছে না। তাই তারা স্বল্প অর্থ ব্যয়ে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পরে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় নামে। এই চক্রটিই পেনডেমিকের সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার করেছিল করোনায় বাংলাদেশে দুই মিলিয়ন অর্থাৎ বিশ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। সর্বশেষ আল জাজিরায় বাংলাদেশবিরোধী রিপোর্ট প্রকাশ তারই অংশ। এই রিপোর্টে বাংলাদেশকে তারা একটা মাফিয়া রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলো। অথচ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আজ পৃথিবীতে এক আদর্শ রাষ্ট্র।
এই চক্রটি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বাংলাদেশে আরেকটি এক/এগারো কিংবা ‘আরব বসন্ত’ ঘটানোর জন্য গভীর স্বপ্নে বিভোর। এই চক্রটির সদস্য দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তি। এদের কেউ কেউ বর্তমান সরকারের সময়ই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এই সময়ই তাদের জৌলুস বেড়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা আজ দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের পক্ষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমাদের সময়ে তাদের শরীরে সঞ্চিত চর্বি তারা আজ আমাদের বিরুদ্ধেই ‘বার্ন’ করছে। তারা বাংলাদেশে একটা কিছু করতে চায়। তারা খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মা। একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঠিক আগের দিনও মোশতাকের ভূমিকা উন্মোচিত হয়নি। কিন্তু আজ তাদের কারো কারো ষড়যন্ত্র আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে। এদের এখনই প্রতিহত করা দরকার।
তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়ে এবার আল জাজিরার আশ্রয় নিল। বাংলাদেশবিরোধী আল জাজিরার এই আজগুবি রিপোর্ট বাংলাদেশের মানুষ বর্জন করেছে। সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, কজন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি বিদেশে পলাতক অবস্থায় ডিজিটাল মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও সাংবিধানিক সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে চরম উসকানিমূলক বিষোদগার ও অপপ্রচার করেছে, সেটি নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ।
তারা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের বিরুদ্ধে কিছু উদ্ভট ও হাস্যকর অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিষোদগার করেছে। বিশেষভাবে আমাদের জাতীয় সশস্রবাহিনী সম্পর্কে চরম বিষোদগার করেছে। তাদের কেউ কেউ আমাদের রাষ্ট্র ও পবিত্র সংবিধানের বিরুদ্ধে চরম অবজ্ঞামূলক মন্তব্য ও অপপ্রচার করেছে ।
তারা তিরিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে আখ্যা দিয়েছে ‘পরাধীন জনগণের রাষ্ট্র’ হিসেবে। তারা আমাদের সমাজকে আখ্যা দিয়েছে ‘পরাধীন সমাজ’ হিসেবে। এদেশে গণতন্ত্র নেই বলে নানা ধরনের মায়াকান্না করেছে। তারা মন্তব্য করেছে, সকল সেক্টরেই বাংলাদেশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে! তাদের এই উদ্ভট মন্তব্য শুনলে সারা বিশ্বই হাসবে। কারণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের সকল সূচকেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
তাদের বক্তব্যে এটি পরিষ্কার, তারা রাষ্ট্রের ভেতরে যেকোনো উপায়ে অস্থিরতা তৈরি করতে চাচ্ছে। দেশি-বিদেশি এই চক্রটি নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের এই অপপ্রচার কখনো বিশ্বাস করে না; এই অপপ্রচারে কখনো কর্ণপাত করে না। কারণ তারা জানে, বাংলাদেশ আর বাঙালি জাতি আজ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে, তার সবটুকুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আর রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছে।
এই ষড়যন্ত্রকারীরা এদেশে গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকার নেই বলে নানা ধরনের মায়াকান্না করেছে। অথচ সারা বিশ্বে গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডম হাউজে’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী যে সকল দেশ গণতন্ত্র আর নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে উদ্বেগজনক অবস্থানে রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই। তারা কি জানে, গণতন্ত্র আর নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে গত বছর বিশ্বে ৬৪টি দেশের ফল নিম্নগামী ছিল আর মাত্র ৩৭টির ছিল ঊর্ধ্বগামী। তাদের প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র আর নাগরিক অধিকারের এই নিম্নগামী ধারা একটানা ১৪ বছর ধরে চলছে। এই বিষয় নিয়ে আওয়ামীবিরোধীদের কোনো বক্তব্য নেই । বক্তব্য নেই আমাদের কোনো সুশীল ব্যক্তিত্বের কিংবা জাতির বিবেক খ্যাত কোন প্রথিতযশা সাংবাদিকের। বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি, সরকারবিরোধী এই চক্রটি পশ্চিমা দেশগুলোকে মুরুব্বি মেনে বার বার তাদের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে আসছে। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো কি কারো জন্য কিছু করে? তারা কি গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা? তাদের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্র আর মানবাধিকার শিখতে হবে? পশ্চিমা বিশ্বের ১৪টি রাষ্ট্র বার্লিন কনফারেন্সে চুক্তির মাধ্যমে সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশকে যার যার মতো করে শোষণের জন্য দখল করেছিলো। এই দখল করার ঘটনাকে ইতিহাসে স্ক্রাম্বল ফর আফ্রিকা বলা হয়। ইউরোপিয়ান এই দেশগুলো আফ্রিকার দেশগুলোতে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই শোষণ করেনি, এই সকল দেশে তারা ব্যাপক নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, এমনকি কিছু দেশে ব্যাপক গণহত্যা করেছে; যেমন আলজেরিয়া ফ্রান্স আর নামিবিয়ায় জার্মানি ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল। প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্পেনের কাছ থেকে ফিলিপিন্সকে ৪৮ বছরের জন্য দখল করে নিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে আমাদেরকে মানবাধিকার আর সুশাসন শিখতে হবে ?
একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, আওয়ামী লীগবিরোধী এই চক্র বহু বছর ধরেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে আসছে। সশস্র বাহিনীকে নিয়ে তারা অনেকবারই ষড়যন্ত্র করেছে। পঁচাত্তরে তারা সেই ষড়যন্ত্র করেই সপরিবারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো। আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকেও তারা সশস্র বাহিনীকে নিয়ে এদেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলো। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণেই নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর একানব্বইয়ের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিলো। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বহু বছর যাবৎ খালেদা জিয়া সেনানিবাসের একটি সরকারি বাড়ি দখল করে রেখেছিল। এই চক্রটিই ১৯৯৬-এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই জন্য ওই বছরের মে মাসে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিল। সেই চক্রটিই ২০০১ সালে এদেশের গ্যাস সম্পদ বিদেশিদের কাছে দেয়ার মুচলেকা দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এক প্রশাসনিক ক্যু’র মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। একই গোষ্ঠী ২৯ অক্টোবর ২০০৬ এবং ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল।
একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, এক/এগারোর ঘটনা ছিল একটি ব্যাক-আপ প্ল্যান অর্থাৎ একটি পূর্ববর্তী ঘটনা ঘটানোর পর সেটি ব্যর্থ হলে পরবর্তী ঘটনা হিসেবে এটি ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। পূর্ববর্তী ঘটনাটি ছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্নীতি আর দুঃশাসনের কারণে পরবর্তী নির্বাচনে যখন তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত, সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরও যখন নির্বাচনে জেতার কোনো ভরসা পাচ্ছিল না, তখন বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করানো হলো। জনাব ইয়াজউদ্দিন একাধারে রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধান হলেন। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এই ক্যু করানোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারেন। বিএনপি-জামায়াতের এই ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগবিরোধী গোষ্ঠী। এই ক্যু বাস্তবায়নে তারাই কাজ করেছিল। এই গোষ্ঠী যখন দেখল, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে এবং তারাই তাকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে আর ইয়াজউদ্দিনের সরকার কোনোভাবেই এটি প্রতিরোধ করতে পারবে না, ঠিক তখনই তারা তাদের ব্যাক-আপ প্ল্যান বাস্তবায়ন করল। এক/এগারো ঘটাল অর্থাৎ ‘ক্যু উইদিন দি ক্যু’ (coup within the coup) ঘটাল। তার পরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।
একটি বিষয় ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, বিএনপি তথা আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিটি সবসময়ই ষড়যন্ত্র আর অসাংবিধানিক পদ্ধতিতেই ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছে। ষড়যন্ত্র আর অসাংবিধানিক পথেই তাদের আস্থা। তবে সেই পথও তাদের জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক বিধান সংযোজনের মাধ্যমে তাদের এই অসাংবিধানিক পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, যা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের এই বিধান অনুযায়ী অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতা গ্রহণের উদ্যোগ কিংবা পরিকল্পনা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ এবং এই বিধান অনুযায়ী এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো এই সকল বিষয় জানে। বাকিরা হয়তো জানে না। আমার বিশ্বাস এই সকল বিষয় অনুধাবন করলে অনেক ষড়যন্ত্রকারী থেমে যাবে। তবে বাস্তবতা হলো তারা সকলেই বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে তাদের সকল ষড়যন্ত্রই নস্যাৎ হচ্ছে । ষড়যন্ত্রকারীদের শক্তি এবং নেটওয়ার্ক দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে ।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সকল ষড়যন্ত্র শুধু শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, এই ষড়যন্ত্র আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। কারণ শেখ হাসিনার নিরাপত্তার সঙ্গে আজ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জড়িত। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ধারাবাহিক সাফল্যে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। চলমান এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শুধু রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহের ওপর নির্ভর না করে আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে হবে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। আমাদের এটি জানান দিতে হবে-ষড়যন্ত্রকারীরা সাবধান ! আমরা প্রস্তুত তোমাদের প্রতিহত করতে !
লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।