সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / শেখ হাসিনার সাফল্যের এক যুগ

শেখ হাসিনার সাফল্যের এক যুগ


নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারের “ধারাবাহিকতা” একটি দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রধান কারণ হল বিদায়ী সরকারের অনেক সিদ্ধান্তই ক্ষমতার পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে যেতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টানা তিনবার ক্ষমতা ধরে রেখেছে। ২০০৯ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের পরে এক দশক পেরিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের। গত বারো বছরে তারা বিভিন্ন খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ’লীগ যেহেতু ক্ষমতায় এক দশক পার করেছে, তাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আওয়ামী লীগের এক দশকের একটি মূল্যায়ন করা।

বিগত ১২ বছরে আ.লীগ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা। এটি বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করার মাধ্যমে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকার জনগণের সামনে যে প্রতিশ্রুতি করেছিল তা পূরণ হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হলেও জ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত কমিশনের তুলনায় বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়াটি অনেক বেশী ন্যায্য অথচ স্বচ্ছ ছিল।

বর্তমান সরকারের আরও একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে এশিয়ার বাঘ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বর্তমান সরকারের আরেকটি অসামান্য সাফল্য। আমরা আশা করছি বর্তমান সরকারের আমলে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় আমাদের অন্তর্ভুক্তি হবে ২০২৪ সালে। কোভিড -১৯ মহামারীর বিরূপ প্রভাবের মধ্যেও ২০২০ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রথম টানেলের স্থাপনের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সরকারের অদম্য সাহস বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থাকে নির্দেশ করে। গত এক দশকে বাংলাদেশ স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জন করেছে। এমনকি মহামারীর সময়ও, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভাল ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবিশ্বাস্য ও দুর্দান্ত সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের কারণে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে “এজেন্ট অফ চেঞ্জ” এবং “প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন” পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। আইসিটি খাতে সরকারের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এগুলো হ’ল “উইটসএ গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯”, “ডিসিডি এপ্যাক অ্যাওয়ার্ড -২০১৯” এবং “গভর্নসাইডার ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯”। দারিদ্র্যতা বিমোচনে অবদানের জন্য তাঁকে “সাউথ-সাউথ পুরস্কার” প্রদান করা হয়েছে। ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্যা ল অফ দ্যা সিতে মিয়ানমারের সাথে এবং ২০১৪ সালে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে জয় সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মিয়ানমার সাথে সীমানা খোলার সরকারের সিদ্ধান্তকে বিশ্ব সম্প্রদায় প্রশংসা করেছে। নিঃস্ব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত খোলার সাহসী সিদ্ধান্তের স্বীকৃতি হিসাবে শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘চ্যানেল-৪ নিউজ’ ২০১৭ সালে “মানবতার জননী” হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এই সাফল্যগুলো আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে স্থানীয় নেতা থেকে বিশ্ব নেতাতে রূপান্তর করেছে।

বিভিন্ন সামাজিক সূচকের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সাফল্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শেখ হাসিনার বুদ্ধিমান নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমজিডি) নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্জন করেছি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জনে সরকার কঠোর পরিশ্রম করছে। এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য আমরা এখন সঠিক পথে চলেছি।

সরকারের আর একটি সাফল্য ছিল ক্যাসিনোসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া। ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা কারাবরণ করেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়সহ উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে । দেশবাসী এসকল পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আশা করা যায় যে, সামনের দিনগুলোতে অন্যান্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবে।

কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সরকার তার যোগ্যতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক উন্নত দেশ যখন মহামারীটির বিপর্যয় মোকাবিলায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ সরকার মহামারী মোকাবিলায় এবং অর্থনীতির গতিপথকে ঠিক রাখতে অসাধারণ কাজ করেছে। ১২০,০০০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সরকারের সাহসী সিদ্ধান্ত সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। এই প্রণোদনা প্যাকেজটি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বড় একটি প্যাকেজ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি, শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সময়ে সরকার লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিয়েছে। সরকার সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতা বাড়িয়েছে এবং উন্মুক্ত বাজারের মাধ্যমে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করেছে। সরকার মারাত্মক ভাইরাসের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত বিপর্যয়কে কার্যকরভাবে পরিচালনা করেছে। মহামারীটির প্রথম দিকে স্বাস্থ্য বিভাগ নড়বড়ে থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরে তা শক্তিশালী হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। মহামারী চলাকালীন সমাজের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারের জোরালো ব্যবস্থা সকলের দ্বারা প্রশংসা হয়েছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা সত্ত্বেও কিছু সমস্যা রয়েছে যেখানে সরকার এখনও সর্বোত্তম পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। প্রথম ইস্যুটি হল শাসন সংক্রান্ত সূচকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে না পারা। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং দুর্নীতি হ্রাস করার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ কত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে হবে। যদিও সরকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতিমূলক আচরণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবুও দুর্নীতির সূচককে উন্নতি করতে হলে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রতি দেশবাসীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারেরও গঠনমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক সত্তা হিসাবে ইসির কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।

বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটারদের ভোটদানের হার বর্তমান সরকারের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎসবমুখোর পরিবেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেশবাসীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে উদাসীনতা বাসা বেঁধেছে। ২০১৩-২০১৪ সালের নির্বাচনী সহিংসতায় যখন বিরোধী দলের সমর্থকরা মানুষের গায়ে ও পরিবহনে আগুন লাগিয়ে কয়েক শতাধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে তখন থেকে এই উদাসীনতার জন্ম নেয়। এই নিশংস কার্যক্রম দেশবাসীর মধ্যে ভয়ের একটি অনুভূতি তৈরি করেছিল যা তাদের হৃদয়ে এখন রয়ে গেছে। সুতরাং তারা নির্বাচন কেন্দ্রে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করে না। নির্বাচনী ব্যবস্থায় দেশবাসীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সুনির্দিষ্ট গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

গত এক দশক ধরে শেখ হাসিনার বিশ্বাসযোগ্য ও বুদ্ধিমান নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যতিক্রমীভাবে দুর্দান্ত সফলতা অর্জন করেছে। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাকী মেয়াদে সরকারের উচিত শাসন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সূচকে উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা । তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের একার পক্ষে সকল বিষয়ে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি জনগণের দায়িত্ব হল দেশের উন্নতির জন্য সরকারকে সহায়তা করা। গত এক দশকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে আমাদের সকলের উচিত সরকারের সকল কর্মকাণ্ডে আকুণ্ঠ সমর্থন করা।

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …