মুক্তমতঃ
আমি হিন্দু, আপনি মুসলমান, সে বৌদ্ধ, তিনি খ্রিস্টান। এটা আমাদের ধর্মীয় পরিচয়। জাতিগত পরিচয় আমরা বাঙালী, বাংলাদেশী, আপনারাও বাংলাদেশী। তার চেয়ে বড় পরিচয় আমি আমরা সবাই মানুষ। আপনার শরীরে যে অঙ্গ-প্রতঙ্গ আছে আমার শরীরেও একই অঙ্গ-প্রতঙ্গ আছে। এই চেতনায় যারা বিশ্বাসী তারা সবাই ভাই ভাই। আমার কাছে ধর্মের চেয়ে মানবতাকেই বড় মনে হয়। মারবতা কি তা সম্পর্কে জানতে আসুন আমরা কিছু মনীষীর বাণী জেনে নেই। আল হাদীস বলে, মহামানবতার সেবায় যিনি নিজের জীবন নিঃশেষে বিলিয়ে দিতে পারে তিনিই মহামানব। যে বিশ্বমানবের হিতসাধন করে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। লেলিন বলেন, মানুষকে বড় করে দেখা এবং মানুষকে ভালোবেসে তার কল্যাণ চিন্তা করাটাই মানবতন্ত্র। টমাস পাইন বলেন, পৃথিবীটা আমার দেশ, সমস্ত মানব জাতি আমার ভাই এবং সবার ভালো করাই আমার কাম্য। সেই সকল ভাই বা মানুষদের আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ পুজো শুধু বাঙালি হিন্দুদের ভেতরই এখন সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রদায়ের গন্ডি পেরিয়ে দূর্গোৎসব আজ জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নিবিশেষে সর্বজনীন এ দুর্গোৎসবতে ঘিরে সকলের মধ্যে গড়ে উঠে এক সৌহার্দ-প্রীতি ও মৈত্রির বন্ধন। উপরের মানবতার সংজ্ঞা থেকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, আমরা যে যাই বলি না কেন, আর যে যে ধর্মই পালন করিনা কেন মূল বিষয়টা কিন্তু এক। সকল ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ ধর্মই বড় ধর্ম। সকল ধর্মেই বলে জগতের সকল প্রাণীর কল্যান হোক। প্রশ্নটা হলো জগতের সকল প্রাণীর মাঝে কিন্তু কোন সম্প্রদায়কে আলাদা করে বলা নাই। তাহলে বিষয়টা কি বোঝা গেল? এখানে সৃষ্টিকর্তা একটি অদৃশ্যতা রেখে দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবে তিনি চেয়েছেন সকলের মঙ্গল হোক। আর সকল জীবের কল্যাণ হলে কোন সম্প্রদায় বাকি থাকে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু আমরা যারা মানুষ নামের সাম্প্রদায়িক পশু এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মের মানুষের রক্ত,মাংস আলাদা মনে করি তাঁরাই মানবতাকে ছোট করি মানসিকতার বিকৃতি করি। আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই কখনও কেউ পর নয় সবাই আপন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুদ্ধ করেছে ,শহীদ হয়েছে। কেন হয়েছে? তারা মানবতার জন্য হয়েছে। কোন ধর্মের হয় নাই। যদি তাই হতো তবে বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট ভেবে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ পরোক্ষ যুদ্ধের বিরোধিতা করত। আমরা যে ভোট প্রদান করি সেখানেও কিন্তু সকলের ভোটের গুরুত্ব সমান। তাহলে আমরা সবাই কিন্তু মানবতার বৃত্তেই বন্দী হলাম। বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ। এই অমানবিক ইস্যুটি অনেকের বিবেককে নাড়া দিছে। বাংলাদেশে সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজ রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভ’তি জানাতে পূর্ণিমায় ফানুস উড়িয়েছে। শিখধর্মাবলম্বীরা টেকনাফে লঙ্গরখানা খুলেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা দুর্গাপূুজার খরচ কমিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মুসলমানরা পাহাড় না কেটে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র বানিয়ে দিয়েছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানবিকতার এমন জন জাগরণ সাম্প্রতিক সময়ে বিরল। এর থেকেই আমরা মানবতার শিক্ষা নিতে পারি।
তাই আসুন দুর্গোৎসবের এই শুভ বিজয়ার শুভক্ষণে আমরা সমাজ জীবন থেকে হিংসা, বিদ্বেষ,সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতা মুছে ফেলি। আশুরিক শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিপন্ন মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করি। মনুষ্যত্বের বেদী মূলে দেশ ও জাতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে যতœবান হই। সকলে মিলে ভাতৃত্ব বন্ধন অটুট করি। আর সবাই মিলে জয়গান করি মানবতার জয় হোক, জয় হোক মানবতার।
লেখক: সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।
[email protected]
০১৭২৩-০৯১২১৩
আরও দেখুন
বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …