রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / শীর্ষে যাবে রফতানিতে ॥ গার্মেন্টস শিল্পে ঈর্ষণীয় সাফল্য

শীর্ষে যাবে রফতানিতে ॥ গার্মেন্টস শিল্পে ঈর্ষণীয় সাফল্য

নিউজ ডেস্ক:

স্বাধীনতার আগে ১৯৬০ সালে একটি ছোট্ট দর্জির কারখানা থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল গার্মেন্টস খাতের পথ প্রদর্শক হিসেবে খ্যাত এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটির। উদ্যোক্তা রিয়াজউদ্দিনের হাত ধরে রিয়াজ গার্মেন্টসই প্রথম বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ফ্রান্সে পোশাক রফতানি শুরু করে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প সময়ের ব্যবধানে এ শিল্প খাতের যাত্রায় যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করে প্যারিস গার্মেন্টস, জুয়েল গার্মেন্টস ও বৈশাখী গার্মেন্টস। শুরুতে মাত্র চারটি গার্মেন্টস থেকে শুভ সূচনা 

হলেও নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বর্তমানে পোশাক রফতানি করছে ৯ হাজার ৪৬৪টি কারখানা। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছরে পোশাক রফতানিতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। চীনের পর বাংলাদেশ বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। করোনা মহামারীর মধ্যেও গার্মেন্টস খাতে বিপুল পরিমাণ বিদেশী ক্রয়াদেশ পাওয়া গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকায় পোশাক রফতানিতে বিশ্বে প্রথম হওয়ার পথে রয়েছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ থেকে বছরে রফতানি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের (২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা) পোশাক। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ও বেগবান করেছে এই শিল্প খাত। নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তীর্ণ হতে সবচেয়ে বড় নিয়ামক শক্তি হিসেবে পোশাক শিল্প খাত ভূমিকা রাখছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিচিতি এনে দিয়েছে এই গার্মেন্টস খাত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের পররাষ্ট্র প্রতিনিধি ও পুলিৎজারজয়ী সাংবাদিক নিকোলাস ক্রিস্টফার তার এক রিপোর্টে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন ‘হোয়াট ক্যান বাইডেন প্ল্যান ডু ফর প্রোভার্টি? লুক টু বাংলাদেশ’। অর্থাৎ বাইডেন পরিকল্পনা দারিদ্র্যের জন্য কি করতে পারে? বাংলাদেশের দিকে তাকাও। ওই প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প নারীদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যে শার্টটি আপনি এখন পরে আছেন, হতে পারে সেটা বাংলাদেশের কোন নারীর তৈরি।

চীনের পর বাংলাদেশ বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। বাংলাদেশ তার নারী জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করেছে। তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে। আজ সেই নারীরাই দেশটির অর্থনীতির খুঁটি। তারাই এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি হয়ে উঠেছেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এক ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর সংগ্রহ করার পর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই প্রতিবেদকই লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্ভাগা একটি দেশ।’ শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয় বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। কিন্তু গত তিন দশকে সেই অনুমান ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করেছে।

জানা গেছে, ফ্রান্সে ১০ হাজার পিস রিয়াজ শার্ট রফতানি করার মধ্য দিয়ে রিয়াজউদ্দিনের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে তিনি পারিবারিক গার্মেন্টস ব্যবসায়ে যোগ দেন ১৯৫৮ সালে। ওই সময় করাচী থেকে কাপড় ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এনে তারা বিক্রি করতেন। দুই বছর পরে তিনি ও তার ভাতিজা মাইজুদ্দিন মিলে চকবাজারে ‘রিয়াজ স্টোর’ চালু করেন। ১৯৭৩ সালে কারখানাটি নাম পরিবর্তন করে মেসার্স রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীকালে কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে ১৯৭৮ সালে প্যারিসভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৩ মিলিয়ন ফ্রাংক মূল্যের ১০ হাজার পিস ছেলেদের শার্ট রফতানি করে। বাংলাদেশী টাকায় যা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ওই বছর বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন চন্দ্রবিজয়ী এ্যাপোলো-১১ এর সেই তিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন। তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শত শত মানুষের উল্লাস ও চিৎকারের ভিড়ের মধ্যে সেদিন রিয়াজউদ্দিন ‘রিয়াজ স্টোর’ এ বানানো তিনটি শার্ট নিয়ে ওই তিন নভোচারীকে উপহার দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনজনের কাছ থেকে ধন্যবাদ ও প্রশংসামিশ্রিত একটি চিঠিও তিনি পেয়েছিলেন।

রিয়াজউদ্দিনের ছোট ছেলে সালাউদ্দিন সম্প্রতি জানান, ষাটের দশকে একটি রিয়াজ শার্টের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১০০ টাকা এবং সমাজের সবচেয়ে ধনী শ্রেণীর লোকেরাই এই শার্ট পরতেন। তবে শার্টের পাশাপাশি তারা দেশীয় বাজারে পুরুষের শার্ট, নারীদের লেগিংস, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি শুরু করেন। তৎকালীন উর্দু রোডে তাদের ফ্যাক্টরিতে সারাদিন আটটি সেলাই মেশিন চলত অর্ডার পাওয়া কাপড় বানানোর কাজে। উন্নতমানের শার্ট বানাতে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে জাপানী কাপড় সংগ্রহ করতেন। চারদিকে তার ব্যবসার সুনাম ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। ভোক্তার চাহিদা মেটাতে বাড়াতে থাকেন সেলাই মেশিনের সংখ্যা । কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার পরিকল্পনাকে থামিয়ে দেয়। তখন চকবাজারের অন্যসব দোকানপাটের সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজউদ্দিনের টেইলারিং শপ এবং ফ্যাক্টরিও পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর রিয়াজউদ্দিন নতুন করে তার ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭৩ এ তিনি এর নাম দেন রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম তৈরি পোশাক কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৯৮ সালে গাজীপুরের বোর্ডবাজাওে তৈরি হয় পাঁচ হাজার শার্ট তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন রিয়াজ এক্সপোর্ট এ্যাপারেল। ২০০৮ সাল পর্যন্ত রিয়াজ শার্ট রফতানি হয়েছে বিশ্বের দশটিরও বেশি দেশে, যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড এবং জার্মানির মতো দেশ। তাদের বার্ষিক রফতানি আয় গিয়ে দাঁড়ায় ৩০ কোটি টাকায়।

সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় প্রজন্ম ব্যবসা থেকে সরে আসায় রিয়াজ গার্মেন্টস আজ আর নেই। তবে স্বপ্নদ্রষ্টা এই ব্যবসায়ী সেলাইয়ের কাজে মেয়েদের নিয়োগের উদ্যোগ নেন। দেশের গার্মেন্টস শিল্পে ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, এর মধ্যে ৪০ লাখ হচ্ছেন নারী শ্রমিক। তারই দেখানো পথ ধরে পরবর্তীতে এ শিল্পে এগিয়ে এসেছেন আরেক স্বপ্নদ্রষ্টা পুরুষ শিল্পপতি নুরুল কাদের খানসহ আরও অনেকে। দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানির সঙ্গে মিলে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত করলেন দেশ গার্মেন্টস, যা দেশের প্রথম শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক কারখানা। দ্বিতীয় প্রজন্মের হাতেও দেশ গার্মেন্টস বর্তমানে সফলতার সঙ্গে এ শিল্প খাতে টিকে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে। শ্রমিকদের জন্য শতভাগ নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে দেশে ‘গ্রীন গার্মেন্টস’ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম জোরেশোরে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। পরিবেশবান্ধব করা হচ্ছে সব পোশাক কারখানা। ইতোমধ্যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দেশের কয়েকটি কারখানা। বিশ্বমানের কারখানা ও কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ভাল করায় অদূর ভবিষ্যতে পোশাক রফতানিতে শীর্ষস্থান দখল করবে বাংলাদেশ।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রধান রফতানিমুখী বস্ত্র খাতের তিনটি উপখাত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-তৈরি পোশাক, নিট শিল্প এবং স্পিনিং শিল্প খাত। বতর্মান এই তিন খাতে মোট কারখানার সংখ্যা ৯,৪৬৪টি। দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানার সংখ্যা ৫,৪৫০টি, নিট শিল্পের সংখ্যা ১,৮২১, স্পিনিং মিল ৩৮৫, টেক্সটাইল উইভিং শিল্প ৭২১, উইভিং মিল ৫৮৪, ডেনিম মিল ২০, হোম টেক্সটাইল ১৭, নিট কাপড় তৈরির মিল ২৩৩ এবং ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মিল রয়েছে ২৩৩টি। এসব কারখানা বিনিয়োগ বোর্ড, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি কর্তৃক নিবন্ধিত এবং স্ব স্ব এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যও। কিন্তু এর বাইরেও প্রায় আরও ২ হাজার কারখানা রয়েছে যারা বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র সদস্য নয়। এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরেও এদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কায়দায় কাগজপত্র ম্যানেজ করে কারখানা সচল রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সম্ভাবনাময় এ শিল্পে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসায় বছর বছর কারখানার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ৩৬ বছরের ব্যবধানে বর্তমান বস্ত্র খাতে নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজারের বেশি। পোশাক শিল্পকে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের বাজারে চীন প্রথম অবস্থানে রয়েছে এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। চীন তৈরি পোশাকের বিশ্ব বাজারের প্রায় ৩৬ শতাংশ সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মাত্র ৬ শতাংশ সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, এ অর্জনেই অনেক উদ্যোক্তা সন্তুষ্ট। তবে এটা কিছুই না। বাংলাদেশের সামনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য মেশিনারিজ, প্রযুক্তি এসব ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ করতেই হবে।

জানা গেছে, তৈরি পোশাক শিল্পে সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেটজাত করার উপকরণ ইত্যাদি শিল্পেরও সম্প্রসারণ হতে থাকে। তাছাড়া পরিবহন, ব্যাংকিং, শিপিং এবং ইন্স্যুরেন্স সেবার চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সবটাই অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। এ ধরনের নতুন পরোক্ষ-কর্মসংস্থান মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের সৃষ্টি যার সুবিধাভোগী আরও প্রায় ২ লাখ শ্রমজীবী মানুষ। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রফতানি আয়ে এই খাতের অবদান ছিল মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১০ সালের মার্চ মাসে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান দাঁড়িয়েছে মোট রফতানি আয়ের ৭৬ ভাগ। বর্তমানে এই শিল্পের রফতানি আরও বেশি। সময়ের পরিক্রমায় তৈরি পোশাক আরও সম্প্রসারিত হয়ে ওভেন এবং নিটিং উপ খাতে বিভক্ত হয়েছে। রফতানি বাড়ায় সমান তালে এ খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে দেশের রফতানিমুখী এই শিল্প খাতটি।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমান মহামারীর আগের চার বছর ধরে দেশটির অর্থনীতি প্রতি বছরে ৭ থেকে ৮ শতাংশ বেড়েছে। যা আরেক শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীনের চেয়েও দ্রুততর। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। যা যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের দশটি কাউন্টির চেয়েও যা বেশি। বাংলাদেশ এক সময় হতাশার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠলেও কীভাবে উন্নতি করতে হয় বিশ্বকে সেই শিক্ষা দেয়ার যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশের। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে এই উন্নয়নের গোপন রহস্য মূলত শিক্ষায় নারীর অগ্রগতি। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ‘দারিদ্র্য বিমোচনের অনুপ্রেরণার আখ্যান হিসেবে বর্ণনা করেছে। বিগত ১৫ বছরে আড়াই কোটি বাংলাদেশী দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদি করোনার কারণে দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা কিছুটা থমকে দাঁড়িয়েছে।

সবুজ পোশাক কারখানায় এগিয়ে বাংলাদেশ ॥ সবুজ পোশাক কারখানা বা গ্রীন গার্মেন্টেসে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫০ টি সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ইউএস গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) এনার্জি এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইনের (এলইইডি) কাছ থেকে এসব কারখানা সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। সবুজায়ন উদ্যোগে ভূমিকা রাখার জন্য গত জুন মাসে এলইইডি সার্টিফিকেশন পায় বিজিএমইএ। তবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এলইইডি সার্টিফিকেশন পেয়েছে এই ১৫০টি কারখানা। এদের মধ্যে ৪৪টি কারখানা প্লাটিনাম, ৯৩টি কারখানা স্বর্ণ, নয়টি কারখানা রৌপ্য এবং চারটি কারখানা রয়েছে সীসা ক্যাটাগরিতে। এছাড়াও, বিশ্বের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার মধ্যে নয়টির মালিক বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, শীর্ষ ১০০ গ্লোবাল প্লাটিনাম কারখানার মধ্যে ৩৯ টি রয়েছে এই দেশে। এর আগে ২০১২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও বিশ্বের প্রথম এলইইডি প্লাটিনাম সার্টিফায়েড কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কারখানার ৩৯টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও প্রায় ৫০০টি কারখানা সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় আছে। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের দূরদর্শিতা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যোগের কারণে। তিনি বলেন, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একটি নিরাপদ শিল্প হিসেবে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। পরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এ শিল্পে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই উদ্যোগ ও অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। গত ১০ বছরে এ খাতের রফতানি দ্বিগুণের বেশি করা সম্ভব হয়েছে। ২০১১ সালে যেখানে রফতানি ছিল ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৯ সালে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

রফতানি বাড়াতে রোডম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রূপকল্প-২১ এর মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে পোশাক রফতানি থেকেই ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটি পূরণ হয়নি। মহামারী করোনাভাইরাসের আঘাতে অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছে তা থেকে মুক্ত নয় এই শিল্প খাতটিও। এ কারণে উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী ১০ বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ হওয়া দরকার। পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে ইতিবাচক প্রচার করতে হবে, সেই প্রচার আসতে হবে এ খাতের বাইরে থেকে। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে ইতিবাচক প্রচারের দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ হাতেম বলেন, চীনের অভ্যন্তরীণ বাজার হচ্ছে ৩২০ বিলিয়ন ডলারের। প্রতি বছর চীনে আমাদের রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে, চীন এ ব্যবসা থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। তাই দেশের সামনে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুযোগ নিতে অবকাঠামোগত সক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদ খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে তৈরি পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জগুলো এখন সবার সামনে পরিষ্কার। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে। তখন শুল্কমুক্ত পোশাক রফতানির সুবিধা পাওয়া যাবে না। তখন তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হবে। কমপ্লায়েন্সের পাশাপাশি পরিবেশসহ ২৭টি ক্যাটাগরিতে ফ্যাক্টরিগুলোকে নির্দিষ্ট মানোত্তীর্ণ হতে হবে। এ অবস্থায় আগামী দিনের বড় কাজ হবে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানো। শ্রমিকের দক্ষতার চেয়ে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ জন্য প্রযুক্তিতে যেতে হবে।

আরও দেখুন

লালপুরে কুরেছান বেগমের ইন্তেকাল 

নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,,,,,,দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নাটোরের লালপুর প্রতিনিধি ও মডেল প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাহীন …