রবিবার , ডিসেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / শিশুদের দেশের প্রকৃত ইতিহাস শেখানোর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

শিশুদের দেশের প্রকৃত ইতিহাস শেখানোর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের দেশের প্রকৃত ইতিহাস শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে কোনো স্বার্থান্বেষী (হায়েনা) গোষ্ঠী বাঙালির অর্জনগুলো আবারও ছিনিয়ে নিতে না পারে।

আজ শুক্রবার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে শেখ হাসিনা একথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি। খবর বাসসের

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদেরকে ইতিহাসটা শিখাতে হবে। ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা দিবস, বাংলা ভাষার জন্য এদেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে গেছে। যে দিবসটা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটা কিন্ত প্রজন্মের পর প্রজন্মের সব শিশুদের জানতে হবে এবং শিখাতে হবে।

জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চ এবং জাতীয় শিশু দিবস সহ প্রত্যেকটি জাতীয় দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে দীক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলবো আমাদের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিতে হবে ছেলে-মেয়েসহ সবাই যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই সত্যগুলো জানতে পারে। কারণ ২১টি বছরতো সবকিছুই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার কখনো কোনো হায়েনার দল বাঙালির যে অর্জন সেগুলোকে যেন কেড়ে নিতে না পারে। তার জন্য দেশবাসীকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের এই গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। আর এই উন্নয়নের প্রত্যেকটি ধারার সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করেই তাদের জন্য কাজ করে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে দারিদ্রের হার ছিল ৪০ ভাগেরও ওপরে তাকে আমরা এখন ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। সেনসাস রিপোর্ট বের হলে এই সংখ্যা আরো কমে আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, তার সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমর্থ হওয়ার পরপরই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে তাই আজকের দিনে সকলের কাছেই তিনি নিজ পরিমণ্ডলে কিছু না কিছু উৎপাদন করার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বার্তাটা শুধু আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছেই নয়, আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সমগ্র দেশের কাছে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যার যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে এবং যে যেখানে যতটুকু পারেন উৎপাদন করবেন। অর্থাৎ কারো কাছে ভিক্ষা চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ চলবেনা, কারণ জাতির পিতা বলেছিলেন ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে ’৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ঘর বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরো দেড় লাখ ঘর তৈরির পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ৫০ হাজার ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডে ৫ কোটি টাকা দিয়ে একটি ফান্ড করে দেয়া হয়েছে। সেখানে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক মালিকরা অনেকে অনুদান দিয়েছেন- যেখান থেকে ২ কাঠা জমিসহ বিনে পয়সায় ঘর করে দেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রত্যেকের এলাকাতেই এ ধরনের ঘর তৈরি হচ্ছে। এই করোনাভাইরাসের সময় যেমন প্রণোদনা দিয়েছি পাশাপাশি এই ঘরগুলো নির্মাণ কাজে যারা সম্পৃক্ত সেখানেও একটা আর্থিক স্বচ্ছলতা মানুষ পেয়েছে। কাজেই সেখানেও আপনাদের কিন্তু একটা দায়িত্ব রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা এবং গৃহহীনদের-দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার জন্যও আপনাদের স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টা আপনাদের সবসময় মাথায় রাখতে হবে।

মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা সম্প্রসারণে তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি করার জন্যই আমরা একে একে সব পদক্ষেপ নিয়েছি।

তিনি এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা সকলকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে করোনাভাইরাস দূর না হওয়া পর্যন্ত তা অবশ্যই মেনে চলার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।

সরকার প্রধান বলেন, ভ্যাকসিন আমরা দিয়ে দিয়েছি। প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে।

‘জয় বাংলা’কে তার সরকারের জাতীয় স্লোগানে পরিণত করায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এখনো ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান দেয় না, তারা আসলে দেশের স্বাধীনতায় অবিশ্বাস করে।

তিনি বলেন, যারা এখনো ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয় না, তারা আসলে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার আদর্শে বিশ্বাস করে না। আমাদের এই কথাটাই মনে রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘জয় বাংলা’ স্লোগান একসময় দেশে নিষিদ্ধ ছিল এবং সেই সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে গিয়ে, এই স্লোগান দিতে গিয়ে বহু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। কিন্তু আজকে সেই স্লোগান আবার ফিরে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এই স্লোগান দিয়ে রক্ত ঝরিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন, শহীদ হয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ও খুনি চক্র এই স্লোগানকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল।

তার সরকার দেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং একদিন এদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করেও গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে আগামী প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে কর্তব্য পরায়ণতায় ব্রতী করে তোলার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

দাদা-দাদিসহ আত্মীয় পরিজনের কাছ থেকে জাতির পিতার শৈশব-কৈশোর সম্পর্কে শোনা অনেক ঘটনাই আলোচনায় তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রী। যার মূলে ছিল মানবিকতা ও দেশের মানুষের কল্যাণ চিন্তা। যুদ্ধ বিধবস্থ দেশ পুনর্গঠনকালে সম্ভ্রমহারা নারীদের পুনর্বাসন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে দেশের তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়নে তার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এসব নির্যাতিত মা-বোনদের অনেককেই আমাদের সমাজ তখন গ্রহণ করতে চায়নি। তাদের পুনর্বাসন বোর্ড করে চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করে দেন তিনি।

তার মা বঙ্গমাতার সহায়তায় নির্যাতিত মেয়েদের অনেককে বিয়ে দেয়ার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেখানে বাবার নামের স্থানে জাতির পিতা লিখে দিতে বলেন, ‘লিখে দাও পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিকানা ধানমন্ডি ৬৭৭ নম্বর প্লট  ৩২ নম্বর সড়ক।

শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতি ছোটবেলা থেকে তার অনেক দয়া ছিলো, তাদের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দিতেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র হাতে মানুষ এদেশ স্বাধীন করেছে। পরবর্তী সময়ে এ দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করতেও কাজ শুরু করেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। তখনই ষড়যন্ত্র করে তাকে এবং তার পরিবারকে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনে একটি দুর্ভাগ্যের দিন। কারণ এ দিন ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নেয় জাতির পিতার প্রাণ। যার মাধ্যমে এদেশের মানুষ তাদের সকল সম্ভাবনাকেও হারিয়ে ফেলে। আমরা দুই বোন তখন বিদেশে থাকায় বেঁচে যাই কিন্তু স্বজন হারাবার বেদনা নিয়ে দুর্বিসহ ছিল সে জীবন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, তারা তাদেরকে তখন দেশে ফিরতে দেয়নি। ফলে রিফিউজি হিসেবে জীবন কাটাতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ তাকে ’৮১ সালে সভাপতি নির্বাচন করার পরেই শত বাধা উপেক্ষা করেও তিনি দেশে ফিরে আসেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ফিরে এসেছিলাম একটি লক্ষ্য সামনে নিয়ে। সেই লক্ষ্য হলো- যেজন্য আমার বাবা সারাজীবন যে সংগ্রাম করে গেছেন, তা যেন ব্যর্থ না হয়।

তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, হারিয়েছিলাম বাবা, মা, ভাই সহ সবাইকে কিন্তু এই বাংলার মানুষের মাঝে আবার ফিরে পেয়েছিলাম হারানো বাবা-মায়ের স্নেহ ও ভালবাসা। এটাই ছিল আমার সব থেকে বড় শক্তি। এটা এখনো আমার সব থেকে বড় শক্তি।

আজ শবে বরাতের রাতে দেশের জন্য দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য সকলের কাছে দোয়া চান তিনি ।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেন সম্পূর্ণ করোনা ভাইরাস মুক্ত হতে পারি এবং বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সহ মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত হবার পাশপাশি তারা যেন উন্নত জীবনের অধিকারি হতে পারে। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ যাদেরকে আমরা হারিয়েছি, যারা আপনজন হারিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনারও তিনি আহ্বান জানান এবং তিনি নিজেও সকলের জন্য দোয়া করবেন বলেও উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দলের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খানও বক্তৃতা করেন এবং গণভবন থেকে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

আরও দেখুন

পাখি ও বন্যপ্রাণি শিকারের তথ্য দিলেই উপহার! ১১ টি শালিক অবমুক্ত, পাখি রক্ষায় লিফলেট বিতরণ 

নিজস্ব প্রতিবেদক ,,,,,,,,,,,,,,,,,,চলনবিলে পাখি শিকার রোধ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন …