নিউজ ডেস্ক:
শিক্ষাখাতে করোনাভাইরাস মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৬২২ কোটি টাকার সমপরিমাণ ৫ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
সোমবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বক্তৃতায় দেশটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়কমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমাদ এ ঘোষণা দেন।
শিক্ষাখাতের দুই প্রকল্পে এ অর্থ খরচ হবে জানিয়ে ঢাকা সফররত এই মন্ত্রী বলেন, “এটা মহামারীর মধ্যে স্কুল বন্ধের মতো ধাক্কা সামলে শিক্ষাখাতকে ঠিক পথে আনার পেছনে ভূমিকা রাখবে।
“একটি প্রজন্মের ভবিষ্যত বিপদের মধ্যে আছে। প্রত্যেক শিশু যাতে বঞ্চিত শিক্ষা পেতে পারে এবং তাদের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের।”
ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘এডুকেট দ্য মোস্ট ডিজঅ্যাডভান্টেজড চিলড্রেন’ নামের প্রকল্পের অধীনে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হবে। মেয়ে ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুর কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করবে যুক্তরাজ্য সরকার।
ইউনিসেফ ও ব্র্যাকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে এ প্রকল্প।
অন্যদিকে ‘বাংলাদেশে শিক্ষার মানোন্নয়ন’ নামের প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। ইউনিউসেফ ও বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে এ প্রকল্প।
তিন দিনের ঢাকা সফরে আসা ব্রিটিশমন্ত্রী লর্ড আহমাদ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য: অগ্রগতির অংশীদার’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন।
শিক্ষাখাতে সহায়তার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রোহিংগা শরণার্থী সঙ্কটসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মহানুভব ও উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় রোহিঙ্গা সঙ্কট কক্সবাজার এলাকা অনিরাপদ পরিবেশ তৈরির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
”এ সমস্যার সমাধানের পথ জরুরিভিত্তিতে বের করতে যুক্তরাজ্য আপনাদের পাশে আছে, যাতে এমন মানবিক সঙ্কটের সমাধান বের হয়ে আসে।“
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সাড়াদান এবং তাদের উপর বলপ্রয়োগের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মধ্যে এই সঙ্কটের চূড়ান্ত সমাধান নিহিত।
”জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার নিশ্চয়তা আমি আপনাদেরকে দিচ্ছি। যদিও দুঃখজনকভাবে এক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোকে আমরা সঙ্গে পাচ্ছি না।”
কপ২৬ এর মধ্যে ’বাংলাদেশ জলবায়ু ও পরিবেশ কর্মসূচিতে’ যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এক কোটি ২০ লাখ পাউন্ড দেওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ম্যানগ্রোভ বন, নারীর ক্ষমতায়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে এই অর্থ খরচ হবে।
বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়, তার নির্দেশনা সংবিধানেই আছে।
”আমি আশা এবং বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ তার লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে উন্মুক্ত ও প্রগতিশীল নির্বাচন পাবে।”
সোমবার তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়কমন্ত্রী ও সংঘাতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি লর্ড তারিক আহমেদ অব উইম্বলডন।
মঙ্গলবার লর্ড আহমেদ কক্সবাজার পরিদর্শন করবেন এবং মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা বিষয়ে আলোচনা করবেন।
পরিদন বুধবার ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিল অব মিনিস্টারসে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।