ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদশের সব ক্রান্তিকালেই তিনি অগ্রভাগে থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বিদেশি বন্ধু হিসাবে ২০১৩ সালে সালে তাকে দেয়া হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা।
নিউজ ডেস্ক:
১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মিরাটি গ্রামের এক বাঙালি পরিবারে জন্ম, বিয়ে বাংলাদেশের নড়াইলে। স্ত্রী সংগীত শিল্পি শুভ্রা মুখোপধ্যায় নড়াইলের মেয়ে। আপাদমস্তক ছিলেন বাঙ্গালি, বাংলাদেশের যেকোন সংকটেও রেখেছেন সেই পরিচয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই রাজ্যসভায় প্রনব মুখার্জি ভারত সরকারে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি তোলেন। পরে ইন্দিরা সরকারের পক্ষে হয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন আদায়ে ইংল্যান্ড ও জামার্নি সফর করেন।
জাতির আরেক সংকট ৭৫ এর আগস্টের পর সহযোগীতার হাত বাড়ান বাংলাদেশের দিকে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দিকে বাড়ান সহানভুতির হাত। তিনি জাতির পিতার পরিবারের ছিলেন পারিবারিক বন্ধুও। তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর শেষ কৃত্যে শ্রদ্ধা জানাতে জানাতে হাজির হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রণব মুখার্জি বীরভূমের সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র ছিলেন। কলেজটি তখন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিলো। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে এমএ এবং এলএলবি করেন। কর্মজীবন শুরু করেন কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে। কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন। আর রাজনীতির শুরু ১৯৬৯ সালে। প্রথমবারের মতো কংগ্রেসের হয়ে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে প্রতিরক্ষা, অর্থ, বিদেশ, রাজস্ব, জাহাজ-চলাচল, পরিবহণ, যোগাযোগ এবং শিল্প ও বাণিজ্যের মতো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
প্রণব মুখার্জি দুইবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাজ্যের ইউরোমানি পত্রিকার এক সমীক্ষায় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর অন্যতম বিবেচিত হন। ২০০৮ সালে প্রণব মুখার্জি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন। আর ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত করা হয় তাকে।
বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের অকৃত্তিম বন্ধুর স্বীকৃতি হিসাবে বিশেষ সম্মানননা ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া বিশেষ ডিগ্রি।