নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদ কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।’
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যের ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার গতকাল অষ্টম দিনের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। তিনি বাংলাদেশকে নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ বা দ্বিতীয় ঘর বলে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ আর ভুটানের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য আছে বলেও মন্তব্য করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান এদিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এবং ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্গিও ম্যাটেরালার শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশ দুটির রাষ্ট্রদূতরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্চ মিশেলের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এছাড়া ভ্যাটিক্যান থেকে পাঠানো পোপ ফ্রান্সিস এবং ভারতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে উত্সর্গ করে বন্ধুরাষ্ট্র ভুটানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, স্পন্দন পরিবেশিত ‘মহাকালের গণনায়ক :তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘শতবর্ষ পরেও’, কনসার্ট ফর বাংলাদেশের চুম্বক অংশ ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক দেশি শিল্পীদের পরিবেশনা এবং সব শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে ‘জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুটানই প্রথম দেশ, যে স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা ভুটানের জনগণের সেই অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি।’ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুককে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা হিসেবে পেয়ে এদেশের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান। আমার বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি এবং তার দল যে দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্র্রসারণে নৌযোগাযোগব্যবস্থা চালুতে বাংলাদেশ-ভুটান ঐকমত্য
দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নৌযোগাযোগব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভুটান একমত হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করা হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তিকে লাভজনক করে তুলতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সহযোগিতায় দ্বিপক্ষীয় এবং ত্রিপক্ষীয় জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনে সমঝোতা স্মারক তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সেদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিপল এট্রিসহ পূর্ণ মেয়াদি ভিসা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। জবাবে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহিদুল করিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের বাংলাদেশ সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সড়ক, রেল ও বিমানযোগাযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন। তারা আন্তঃরাষ্ট্রীয় পানিপথ ব্যবহারের জন্য এসওপি ও ট্রানজিট চুক্তির খসড়া প্রটোকল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেছেন।