নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের মাত্র দশমিক ১৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছালেই শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার সকল মানুষের ঘরে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের শুভক্ষণে বিদ্যুত বিভাগ আলো পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার পূরণ করতে যাচ্ছে। সরকারের এই অর্জনকে বিশ্লেষকরা দেশের অসাধারণ অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন।
শনিবার শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিয়ে জুম সেমিনারের আয়োজন করে পাক্ষিক এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ার। এতে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির প্রধান ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন থেকে দেশ কতটা পিছিয়ে রয়েছে, কিভাবে সেই লক্ষ্য পূরণে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে তা তুলে ধরেন।
বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধানে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ রয়েছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এটি পূরণ করতে আমাদের ৫০ বছর সময় লেগে গেল। তিনি বলেন, এই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের বদলে অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে এই লক্ষ্য পূরণ হতো না। অধ্যাপক ইজাজ বলেন, ১৯৯৫ সালে ভারতে বিদ্যুত সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৯০ ভাগ। তখন আমাদের ৬০ ভাগও নয়। সেই জায়গা থেকে আমরা অনেক এগিয়েছি। ভারত এখনও শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিতে পারেনি। সেখানে আমরা এটি ঘোষণা করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, শুধু বিদ্যুত পৌঁছালেই হবে না, মানুষ যাতে মানসম্মত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সুবিধা পায় সে বিষয়টি দেখতে হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সেমিনারের মূল প্রবন্ধে জানান, দেশের আর মাত্র তিন লাখ সাত হাজার ২৪৬ গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধার বাইরে রয়েছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (পিডিবি) নয় হাজার ৭৯৫টি গ্রামের মধ্যে দুই হাজার ৫২টি গ্রামে এখনও বিদ্যুত পৌঁছায়নি। একইভাবে আরইবির ৮৪ হাজার ৭০০টি গ্রামের মধ্যে এক হাজার ১৪টি গ্রাম বিদ্যুতায়নের বাইরে রয়েছে; যেখানে দুই লাখ ৪৩ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এছাড়া ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৯টি গ্রাম রয়ে গেছে বিদ্যুত বিতরণের বাইওে; যেখানে তিন হাজার ৫৬৮ গ্রাহক রয়েছেন। আর নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) চার গ্রামে রয়েছে ১৭ হাজার ৭২৬ গ্রাহক।
মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির শতকরা হিসেবে মাত্র দশমিক ১৯ ভাগ গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধার বাইরে রয়েছেন। যাদের সবাই অফগ্রিড এলাকার। দুর্গম চরাঞ্চলের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় এসব গ্রামের অবস্থান। এসব গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছানে দুষ্কর বিষয়।
এরপরও কিভাবে সেসব এলাকাকে বিদ্যুতায়িত করা হচ্ছে এমন উদাহরণ দিতে গিয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেনর বলেন, আমাদের বিতরণ এলাকার মধ্যে হাতিয়া, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, আশুগঞ্জ, সোনারামপুর দুর্গম এলাকা। এসব এলাকায় গ্রিড নির্মাণ করা কষ্টসাধ্য। আবার অর্থনৈতিকভাবে লাভজনকও নয়। কিন্তু এরপরও আমরা সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুত পৌঁছে দিচ্ছি। কিন্তু হাতিয়া নোয়াখালীর উপজেলা। এখানে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে হলে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু মূল গ্রিড থেকে এতটা দূরে যে এখানে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুত দেয়া কঠিন। এজন্য সেখানে একটি পৃথক ১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সামনে আমাদের বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, এমন প্রচেষ্টাই আমরা চালাচ্ছি। এজন্য কিছুটা সময়েরও প্রয়োজন।
ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ শফিক উদ্দিন বলেন, আমাদের অর্জন ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমের অবহেলিত অঞ্চল হিসেবে এই এলাকা অতীতে অনেক পিছিয়ে ছিল। তিনি বলেন, দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ সোলার মিনিগ্রিড থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনছে। এটা একটি বৈষম্য। সকল নাগরিককে সমান দামে বিদ্যুত সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যেটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, আমাদের যেসব দুর্গম চরাঞ্চল রয়েছে সেখানে আমরা সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
আরইবির সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেগুলোর কাজ শেষ হবে। যেসব গ্রামে একেবারেই গ্রিড পৌঁছানে সম্ভব নয় সেসব গ্রামের জন্য আমরা সোলার হোম সিস্টেম কিনছি। আগামী জানুয়ারিতে সেগুলো হাতে পাওয়া গেলে দ্রুত সেগুলো লাগিয়ে দেয়া হবে।
ইপি সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে খন্দকার সালেক সুফি এবং শাহ জুলফিকার হায়দার সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।