ভূমি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভূমি সংস্কার বোর্ডকে ভূমি ব্যবস্থাপনা বোর্ডে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ জন্য ভূমি সংস্কার বোর্ড আইন-১৯৮৯-এর বদলে ভূমি ব্যবস্থাপনা বোর্ড আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বোর্ড ভূমি অধিদপ্তরের মতো ভূমিকা পালন করবে। বাড়বে ডিজিটাল সেবার পরিধি।
এই আইন পরিবর্তনের প্রস্তাবে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পর প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি শিগগির এটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
ঢাকা বিভাগের উপভূমি সংস্কার কমিশনার রেজাউল কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, সংশোধিত আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বোর্ডের কার্যক্রম তদারকি ও সেবার মান বাড়বে।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের বর্তমান জনবল ১০৬ জন। বোর্ডের সক্ষমতা বাড়াতে ৩৫৫ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বোর্ডের দুজন সদস্যের বদলে চারজন করতে বলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
সংশোধিত আইনে বাড়ছে বোর্ডের ক্ষমতা
সংশোধিত আইনে বোর্ডের জনবল কাঠামো, লজিস্টিক সাপোর্ট, ক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উপপরিচালক পদের ঊর্ধ্বে সব পদে প্রেষণে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের বিধান রয়েছে। উপভূমি সংস্কার কমিশনারের পদনাম পরিবর্তন করে উপপরিচালক, সহকারী ভূমি সংস্কার কমিশনারের পদনাম পরিবর্তন করে সহকারী পরিচালক নামকরণ করা হবে। এতে আইন ও গবেষণা শাখা চালু করা হবে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভূমিসেবার পরিধি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিদ্যমান ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মপরিধি ও জনবল পরিধি বাড়িয়ে ভূমি সংস্কার বোর্ডকে শক্তিশালী করা হলে নাগরিকদের সেবা প্রদানে গতিশীলতা আসবে।
ডিজিটাল সেবার পরিধি বাড়বে : ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ২০২১ সালের আগস্টে ভূমি সংস্কার বোর্ডের দায়িত্বগুলো হালনাগাদ করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজ হওয়ায় ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকি করতে হয়। কিন্তু ডিজিটাল তদারকির সক্ষমতা বোর্ডের কম। তাই নাগরিক ডিজিটাল সেবা সঠিকভাবে দিতে হলে ভূমি সংস্কার বোর্ডের সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য বোর্ডে সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলে ডিজিটাল সেবার পরিধি বাড়বে।
এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধান, পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ ভূমি সংস্কার বোর্ডকে দেওয়া হলেও ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের ওপর কার্যত বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ ভূমিকা কম। বোর্ডের সক্ষমতা কম হওয়ায় ভূমিসেবা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ই-মিউটেশনসহ ভূমিসেবা অটোমেশনের সব কার্যক্রমের মাঠ পর্যায়ের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান ও তদারকি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেলের সঙ্গে সমন্বয় করা; অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর আদায় কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা ও তদারকি; উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বাজেট প্রণয়ন, ছাড়করণ ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা; জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ভূমি ব্যবস্থাপনার আওতায় সব ভূমি অফিস ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান, পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী যাঁরা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগকৃত, তাঁদের আন্তর্বিভাগ বদলি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম (নিয়োগ ও পদোন্নতি ব্যতীত) পরিচালনা করা; ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণে অর্পিত/অনাবাসী ও পরিত্যক্ত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও তদারকি, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকি এবং ষান্মাসিক/বার্ষিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো।