উমা চৌধুরী
শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। আমার পিতা, বাবা, যাকে আমরা অর্থাৎ তার কন্যারা বাবুজি বলে ডাকতাম। আমাদের কাছে ছিলেন দূরবর্তী নক্ষত্রের মতো। যার আলো-উষ্ণতায় আমাদের প্রাণের স্পন্দন, কিন্তু সঙ্গ ছিল বিরল। এ যেন শহরের পাওয়ার হাউজ, যার অবস্থান থাকে শহরের খানিক বাইরে কিন্তু যার শক্তি ছাড়া শহর অচল ।
জন্মের পর থেকে বাবাকে আমরা তেমনভাবে কাছে পাইনি । আমরা চার বোন কে কোন ক্লাসে পড়তাম তা তিনি ঠিকমতো বলতে পারতেন না। সারাদিন রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন আর সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষ নিয়েই কাটাতেন। আমাদের বোনদের বিয়েটাও আমার বড় জামাইবাবু বিচারপতি এন. কে চক্রবর্তী ছাড়া হয়তো সম্ভব হতো না। সংসারের প্রতি আমার বাবা একেবারেই উদাসীন ছিলেন। আর সবকিছুই প্রথমে আমার দাদু ও পরে তাঁর মৃত্যুর পর আমার মা অনিমা চৌধুরী সামাল দিতেন।
বাবার সঙ্গ না পেলেও তার কাছ থেকে যেটা শিখেছি- নিজের যা কিছু আছে তা থেকে যতটা সম্ভব গরিব দুখী মানুষের উপকার করা। সততার সাথে জীবন যাপন করা। হরি ঘোষের গোয়াল বলতে যা বোঝায় তাই ছিল আমাদের বাড়ি। সদর দরজা রাত ১২টা পর্যন্ত কখনো বন্ধ হতো না, এমনও অনেক রাত গেছে যখন সারারাতই দরজা খোলা। মানুষ আসছে, যাচ্ছে, খাচ্ছে, আলাপ-আলোচনা করছে। তৎকালীন হিন্দু বা ব্রাহ্মণ পরিবারে যা বিরল ছিল- তা হলো সব ঘরে সব মানুষের যাতায়াত ছিল না, কিন্তু আমাদের বাড়ির শোবার ঘর, রান্নাঘর এমনকি পূজার ঘরেও যে কোনো ধর্ম, বর্ণ বা সম্প্রদায়ের মানুষ অনাসায়ে প্রবেশ করতে পারত । কোনো বাধা নিষেধ বা বিরক্তিও ছিল না। চরম অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন তিনি। আমাদের বলতেন অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্র চর্চার বিষয়, চর্চায় চর্চায় এটি পরিশীলিত রূপ লাভ করে।
ছোটবেলা থেকেই বাবা ছিলেন সাহসী, দুরন্ত ও ডানপিটে। তাঁর পরিবার পরিজনের ইচ্ছা ছিল তিনি জমিদারিত্বের দায়িত্ব নিবেন কিন্তু জমিদারি পছন্দ করতেন না, জমিদারদের জীবনদর্শন ও অত্যাচারী কার্যক্রম ঘৃণা করতেন। তিনি সমাজে বিশেষ শ্রেণির মানুষ না হয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে জীবন যাপন করতে পছন্দ করতেন। তাই তিনি জমিদারি পায়ে ঠেলে সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।
বাবার জন্ম ১৯২৬ সালের ৪ মার্চ নাটোরে। তাঁর পিতা অর্থাৎ আমার পিতামহ নাটোরের ভাবনীর জমিদার জ্ঞানদা গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। বাবা ১৯৪৫ সালে বগুড়ার আদমদীঘি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে যান। ১৯৪৭ সালে বি.এস-সি ক্লাসে অধ্যয়নকালে ভারত বিভক্ত হওয়ায় নানা প্রতিকুল পরিবেশে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং এরশাদ শাসনামলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন্দহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কোনো প্রলোভন বা হুমকি তাঁকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ কার সময় তাঁকে এক বছর কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সাল অবধি তিনি কয়েকবার নাটোর পৌরসভার
চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নাটোর সদরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ৭ নম্বর সেক্টরে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ওই সেক্টরের জোনাল কাউন্সিলের তিনি ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার পরিজন নির্মমভাবে খুন হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সােচ্চার। জননেতা তাঁর অনুসারীদের বলতেন- বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আংশিক বিচার হয়েছে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সফল হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততদিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে তিনি পানাহার করতেন না। বাড়িতেও উনন জ্বলত না। বাড়িতে অরন্ধন ব্রত পালন করা হতো, সকলেই উপবাস থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এমন গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের বিরল দৃষ্টান্ত সচরাচর লক্ষণীয় নয়।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাকে নাটোরের গভর্নর নিয়োগ করে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল অবধি আমৃত্যু তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নাটোর সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সংগ্রাম করেছেন। নীতি ও আদর্শের সঙ্গে তিনি কখনোই আপোষ করেননি। দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্য পালনে তিনি ছিলেন সততা, সাহস ও সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সর্বদলের নেতা এবং আত্মীয়জন হয়ে উঠেছিলেন যা আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের অবশ্য আচরণীয়। তিনি ব্যক্তি থেকে একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন- যার শাখা-প্রশাখা হিসেবে আমরা অবস্থান করছি।
বাবা বড় নেতা ছিলেন তা আমরা শিশুকাল থেকেই অনুভব করেছি কিন্তু কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন তার চাক্ষুষ প্রমাণ পাই ১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর যেদিন ঢাকার সিএমএইচ-এ তিনি আমাদের ছেড়ে পরলোকে গমন করেন। সেদিন নগরবাড়ী ফেরিঘাট থেকে একেবারে নাটোর অবধি রাস্তা দুই পাশে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে ছিল প্রিয় নেতার লাশবাহী গাড়ি দেখার জন্য, তাদের অবিসংবাদিত নেতার মুখটি শেষবারের মতাে দেখার জন্য।
নাটোর শহরের কাউকে কিছু বলতে হয়নি, বা মাইকিংও করতে হয়নি- সব অফিস-আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল- প্রিয় নেতার মৃত্যুশোকে। আমাদের বাড়ি ও পাড়া জুড়ে মানুষে মানুষে সয়লাব। মা, আমরা বোনেরা কাঁদব কখন, গণমানুষের কান্না থামাতেই আমরা ব্যস্ত ছিলাম । মৃত্যুর পরও বাবুজির অবস্থান কেমন শক্তিশালী এই জেলায় তা বুঝতে পারি আমি নিজে যখন রাজনীতিতে আসি। আমাদের কোনো বোন রাজনীতিতে নামার কোনো ইচ্ছে সেরকমভাবে কখনো পোষণ করেনি। পড়ালেখার পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেই চলাফেরা বেশি ছিল। জীবনের প্রায় চার দশক রাজনীতি নিয়ে আমার তেমন কোনো ভাবনা ছিল না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ছিল অন্যরকম। আর রক্তের ডাক ও বংশগতির টান উপেক্ষা করি কী করে? স্বামী ও পুত্রের মৃত্যুর পর চরম একাকিত্বের দিনে নাটোরের জনগণ আমার সঙ্গী ও পরিবার হলো। আর ১৬ কোটি মানুষের চিন্তা-চেতনা পাল্টিয়ে দেওয়া, অনড় উদ্যমী মহীয়সী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় আহবান আমাকে দেখিয়েছে- পৃথিবীর মুক্ত আকাশ, পাইয়েছে-জনতার সেবা করার স্বর্গীয় আনন্দ। তাঁর মতো এমন কৃতজ্ঞ, পরোপকারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বর্তমান পৃথিবীতে বিরল।
জননেত্রী শেখ হাসিনার ৮০-র দশকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন পরবর্তী চরমাবস্থায় এবং অন্যান্য সকল দুঃসময়ে যারা তার জন্য এক পা-ও বাড়িয়েছিলেন- তাঁর এবং তাদের পরিবারের যেকারাে যে কোনো বিপদে তিনি দশ পা এগিয়ে গিয়েছেন। সামান্যের বিপরীতে দিয়েছেন সম্পূর্ণ, যা এই ঘোর কলিতে, দারুণ অবান্ধব দিনে অনন্য উদাহরণ। এরই ধারাবাহিকতায় এদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার পিতার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ২০১৮ সালের স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে মহীয়সী নেত্রী শেখ হাসিনা। নাটোরবাসীকে আবারও কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। বাবুজির মৃত্যুর পর আমাদের বাড়িতে জননেত্রীর সশরীর উপস্থিতি, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা আমাদের পিতৃমৃত্যুর শোক কাটিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বড়-ছোট সব মাপের নেতৃবৃন্দের আমাদের পাশে এমনভাবে এগিয়ে এসেছিল-তখনই বুঝেছিলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘শুধু একটি রাজনৈতিক দলই নয়, একটি একান্নবর্তী পরিবার।’
আমার পিতা নাটোরের উন্নয়নের জন্য সদা ব্যস্ত ছিলেন। তিনি নাটোর পৌরসভার উন্নয়ন সাধন করেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার সুফল হিসেবে আজ নাটোর পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন গোরস্থান সম্প্রসারণ, শ্মশানের উন্নয়ন, বিভিন্ন মন্দির ও মসজিদ এবং উন্নয়ন ও সংস্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। শিক্ষা, ধর্মশিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার, পাঠাগার স্থাপন, নাটোর মুসলিম ইনস্টিটিউট, ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক স্থাপনসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। সাধারণ শিক্ষার পাশপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, মাদ্রাসার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি হকার্স মার্কেট, বিভিন্ন বিপণী কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেন। এছাড়াও নাটোর রাণী ভবানী মহিলা কলেজের (বর্তমানে সরকারি মহিলা কলেজ) তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে নাটোরের বনলতা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বড়গাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নাটোর ডায়াবেটিক হাসপাতাল, নাটোর সুগার মিল প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন । খেলাধুলার উন্নয়নে তাঁর অবদান অসামান্য । তিনি নিজে খুবই ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন। তাই তিনি অসংখ্য ক্লাব ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তিনি শিশু, কিশোর ও যুবকদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সুন্দর জীবন গড়তে তাদের ক্রীড়া শিক্ষায় উৎসাহিত করতেন এবং বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করতেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁর পরলোক গমনের পর বর্তমানে নাটোর স্টেডিয়ামটির নাম ‘শংকর গোবিন্দ চৌধুর’ স্টেডিয়াম রাখা হয়েছে। জননেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরী জনকল্যাণ, রাস্তাঘাটের সংস্কার ও উন্নয়ন, নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে জনপ্রিয় জননেতা হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেন।
পিতার স্বর্গীয় আশীর্বাদ, জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন এবং সর্বোপরি নাটোরের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনে আমি নাটোর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। এখন বুঝতে পারি আমার বাবুজি শংকর গোবিন্দ চৌধুরী নাটোরের উন্নয়নে এবং জনসেবায় কতদূর এগিয়েছিলেন। জনগণের মাঝে তার অবস্থান মৃত্যুর পরেও এত দৃঢ়যে, গর্বে বুক আমার ফুলে ওঠে। সূর্যোদয় থেকে গভীর রাত অবধি নাটোর জেলার যেখানে যাই, যারা আমাকে চেনেন না, তারাও আমার বাবার নাম শুনলে আমাকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে নেন, দোয়া-আশীর্বাদে ভরিয়ে দেন আমার মস্তক। বুঝতে পারি- মানুষকে সৎভাবে ভালোবাসলে, সেবা করলে হাজার হাজার মানুষের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়, নিরাপত্তাবেষ্টনীর প্রয়োজন পড়ে না। বাবুজি বা আমাদের পরিবারের কারো কখনো প্রয়োজন পড়েনি। আমরা রিস্ক ফ্রি পারসন বা ‘মুক্ত মানুষ’ হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছি।
এখন অনেক পাতি নেতাকেও নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাডার নিয়ে চলাফেরা কতে হয়। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সৎ থাকলে এমনটার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাংলাদেশের বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাম্য নয়। আমার পিতা কখনো কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রহণ করেননি, তিনি সব সময় সাধারণভাবে মিশে গেছেন জনতার মাঝে। জনগণ ও তাকে ঠাঁই দিয়েছে হৃদয়ে।
১৯৮১ সালে দুর্বুত্তর তাঁকে চলন্ত ‘সীমান্ত এক্সপ্রেস’ ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছিল হত্যার উদ্দেশ্যে। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে নাটোরে ফেরেন। তিনি তাতেও তিনি দমে যাননি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি জনগণের জন্য কাজ করে গেছেন, যার ফলাফল আমি দেখতে পাই যখন নিজে জনতার কাতারে দাঁড়াই- আমার প্রতি তাদের সমর্থন ও ভালােবাসা দেখে। তাই আমার পিতা, আমার বাবুজিই আমার রাজনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সমগ্র জীবনের পাওয়ার হাউজ- শক্তির, যিনি আছেন নক্ষত্রের মতো জীবনদায়ী দূরত্বে।