নিজস্ব প্রতিবেদক:
লিচুর রাজ্য হিসেবে খ্যাত দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ লিচু বাগানের গাছে গাছে এখন ঝুলছে থোকা থোকা লিচু। ইতোমধ্যেই কিছু গাছের সবুজ লিচু লাল আভায় আচ্ছাদিত হতে শুরু করেছে। সাধারণত বাংলা জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে দিনাজপুরের লিচু পাকতে শুরু করলেও, চাষিরা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে এবার লিচুর দেখা মিলবে জৈষ্ঠ্যের শেষ ভাগে। দিনাজপুরে চাষ হয় মাদ্রাজী, বেদানা, বোম্বাই, চায়না থ্রী, কাঁঠালি লিচু। তবে এসবের মধ্যে বাজারে প্রথম দেখা মিলবে মাদ্রাজী লিচুর। এবছর এ জেলায় লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন।
দিনাজপুর চাল-লিচুর জন্য বিখ্যাত জেলা হলেও ইতোমধ্যেই লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এই জেলা। এই জেলার লিচুর সুনাম দেশ জুড়েই। দিনাজপুরের সদর, বিরল, কাহারোল, নবাবগঞ্জ, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলায় রয়েছে লিচু। তবে বিরল ও সদর উপজেলাতেই অধিকাংশ লিচুর বাগান রয়েছে। মূলত লিচু চাষের জন্য উপযোগী এ অঞ্চলে লিচু চাষে কৃষকের আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে।
বিরল উপজেলার লিচুর বাগান মালিক আনারুল ইসলাম বলেন, সাধারণত মাদ্রাজি জাতে লিচু আগে পাকে আর শেষে পাকে বোম্বাই, বেদানা, চায়না-থ্রিসহ অন্যান্য লিচু। তিনি বলেন, মাদ্রাজি লিচু পরিপক্ব হতে আরও অন্তত ২ সপ্তাহের মতো লাগবে। আর পরিপক্ব বোম্বাই, বেদানা, চায়না-থ্রি বাজারে আসতে সময় লাগবে আরও একমাস। যে ফল আসছে তাতে এক হাজার লিচুর দাম ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা হয় তাহলে লাভবান হবে। আশা করছি বাজারে এবার লিচুর দাম ভালো পাওয়া যাবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলার লিচু চাষি বাবু মিয়া বলেন, বাগানে মাদ্রাজি জাতের লিচুতে রঙ আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ১২-১৪ দিনের মধ্যে এসব লিচু পরিপক্ব হয়ে উঠবে। তবে তিব্র গড়ম হওয়ায় মুকুল কম এসেছে, ফলে লিচুর ফলন কম হওয়ায় চাহিদা থাকবে বেশি। তাছাড়া এবার পরিচর্যার কাজেও খরচ বেশি হয়েছে। তবে লিচুর দাম পাওয়া নিয়ে আশাবাদি চাষিরা।
এদিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট,নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরে কিছু কিছু এলাকায় অপরিপক্ব লিচু বাজারজাত শুরু করেছে বাগান মালিকরা । কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কিছু বাগান মালিক অধিক লাভের আশায় অপরিপক্ব লিচু বাজারে নিয়ে আসছে। এসব লিচু খেলে শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকি থাকবে, এজন্য শিশুদের এসব অপরিপক্ক লিচু খেতে নিষেধ করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না থ্রী ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঠালি ৫৬ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচু গাছ রয়েছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা গাছ ও ফলের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। গতবার দিনাজপুরে লিচুর ফলন ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন। সাধারণত একবার বেশি ফলন হলে পরেরবার ফলন কিছুটা কমে যায়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে ফল পুষ্ট হয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গতবারের তুলনায় এবছরেও লিচু চাষিরা লাভবান হবেন।