নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,
নাটোরের লালপুরে শীতের আগমনে ”মধুবৃক্ষ’ খেজুর রস আহরণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেনগাছিরা বৈচিত্রময় আবহাওয়াপূর্ণ বনলতা সেন উপাখ্যান ধন্য, ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক উত্তরা গণভবন, কাচাগোল্লা খ্যাত নাটোর জেলার”খেজুর রসের প্রাচুর্য্য মণ্ডিত পদ্মা পাড়ের পাড়ের উপজেলা লালপুর ” নাটোর বৃক্ষ প্রেমিক জীবনানন্দের ভাষায় “সহসাই মূর্ত হয়েছে,বসেছেবালিকা খর্জুরছায়ে নীল দরিয়ার কূলে” শীত এলেই গ্রামের বাঙালির প্রথমেই স্মৃতিপটে ভেসে উঠে খেজুর গাছের মিষ্টি রস। আবহমান বাংলার চাষিরা সে বসে নিজেকে ডুবিয়ে নেওয়ার মান্দসিক দৃশ্য না দেখলে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য একেবারেই বৃথা। প্রকৃতির মাঝে এক ধরনের
শূন্যতা বিরাজ করে, সেই শূন্যতার মাঝে এলেই এমন শীত ঋতুর আগমন ঘটে। উত্তরের মৃদু হাওয়াতে ঠান্ডা আমেজ, তা হেমন্ত ঋতুর পরেইযেন অনুভব হয়। শুক্ষ শীতল চেহারা নিয়ে আসে শীত ঋতু। একঘেয়েমি যান্ত্রিকতার জীবনকে অনেক পরিবর্তন এনে থাকে এই শীত ঋতুচক্র। বৈচিত্র্যপূর্ণ গ্রামীণ সংস্কৃতির এমন এই শৈল্পিক ঐতিহ্যের চরম প্রাণোচ্ছলতায় আসলেই অতুচক্র বছর ঘুরেই দেখা দেয় বার বার। হিমেল আবরণ টেসেই উপস্থিত হয় এমন শীত, তার চরম গুক্ষতা, নির্মম রুক্ষতা, পরিপূর্ণ রিক্ততা আবার, বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়েও আসে এমন এই শীত ঋতু। অপর দিকে,এমন শীত ঋতু গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ হয়ে উঠে। তাদের জীবনে শীত বিশেষ করে, তা চাষিদের কাছে ভিন্ন মাত্রায় হাজির হয়। স্বপ্ন আর প্রত্যাশায়, তাদের অনেকখানি খেজুর গাছের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবেই যেন আর্থিক উন্নয়নের বসবাস। চাষির জীবন সংগ্রামে অনেক কষ্টের মাঝেও অনেক প্রাপ্তিই যুক্ত হয় বাংলার জনপ্রিয় তরুবৃক্ষ খেজুর গাছের সঙ্গে ভূমিহীন চাষি, প্রান্তিক চাষি বা দারিদ্র ক্লিষ্ট মানুষের জন্য এই সময়টা হয় অনেকআনন্দদায়ক। কারণ, গাছই তো চাষির অন্নদাতা। শীত আমেজেই প্রকৃতির মাঝখান হতে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য চাষিরা যেন চষে বেড়ায়। সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যায় মেঠো পথ ধরে তার বহিঃপ্রকাশে চমৎকার নান্দনিকতার সৃষ্টি কিংবা অপরুপ দৃশ্যপরিলক্ষিত হয়।গ্রামীণ জনগোষ্ঠী মাকে এমন এই দৃশ্য অবশ্যই শৈশিকতার নিদর্শন। এ শৈল্পিক আস্থা ও বিশ্বাসকে মিয়ে প্রকৃতির মাঝেই বিশাল আকৃতির এক কুয়াশা চাদরে মুড়ি দিতে হয়। শীতেকালে এ রূপ সৌন্দর্যের আর একটি উপাদেয় সামগ্রী ‘খাঁটি সরিষার তেল’, যা শরীরে মালিশ করে অনেকাংশে ত্বকের খসখনে ভাব ও ঠান্ডা দূর করে। এ ভাবেই তেল মালিশে খেজুর গাছে উঠলে নাকি ঠাস্তা দূর হয়। এই শীতেই শাল, সেগুন, আমলকি, জামরুল, কৃষ্ণচূড়ার বনে লাগে হিমেল হাওয়ার চৌওয়া। শীতের এমন ব্যতাসে রিক্ততার সুর বেজে উঠলেও অনেক চাষির আর্থিক উন্নয়নে জন্য এই শীত ঋতুই প্রিয়। ফোঁটা ফোঁটা সঞ্চিত রস নির্গত হবে চোং দিয়ে। হাঁড়িতে জমে রসের ফোঁটা।এভাবে একটি গাছ দৈনিক গড়ে ৫-৬ লিটার রস দিয়ে থাক। কথিত আছে ‘খালি কলসি রেখে দিলে ভরে যায় রসে, সেই রসে দিয়ে জ্বাল মন ভরে সুবাসে’। আবার গাভীর সাথে তুলনায় বলা হয় ‘মাইটা গোয়াল কাঠের গাই-বাছুর ছাড়া দুধ পাই’ কাকডাকা ভোরে খেজুরের রস, মম মাতানো। ঘ্রাণ শহরে বিরল শীতের সাকালে খেজুর রস, মিষ্টি রোদ, কৃষক-কৃষাণির হাসি দারুণ প্রাণশক্তি। কবির ভাষায়, ‘এমন শীতলমিষ্টি কোথা আছে নীর? পান মাত্র তুষিতের জুড়ায় শরীর’। তাই এ গাছকে অনেকে শখের বসে ‘মধুবৃক্ষ’ বলা হয়ে থাকে। এ বৃক্ষ বেশ ভালো জন্মে। তবে নদীর তীর, আংশিক লবণ্যক্ত এলাকা, বরেন্দ্র এলাকাসহ চরাঞ্চলেও জন্মে। বাংলাদেশের সব জেলা বিশেষ করে বৃহত্তর যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে খেজুর গাছ বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ করা হয়। যশোর ও ফরিদপুর দেশের সর্বাধিক খেজুর রস ও খেজুর গুড় উৎপন্ন অঞ্চল। মাটোর ৭ টি উপজেলার ৮ টি পৌরসভা ৫২ টি ইউনিয়ন ১৯৩৪ টি গ্রাম প্রতিটি এলাকা জুড়ে এখন ঐতিহ্যবাহী মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ আহরণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন গাছিরা রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীতে ব্যস্ত গাছিরা আর সেই গুড় বাজারে বিক্রয়ের টাকা দিয়েই সংসার চলে নাটোর জেলার কয়েক লাখ পরিবারের।