নিজস্ব প্রতিবেদক, লালপুর:
সরকারী নিয়ম তোয়াক্কা না করে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই নাটোরের লালপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা । রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আবাদি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ী ও থানা সহ সরকারী হাসপাতাল সংলগ্ন গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা । যা সরকারী নিয়ম এর বাহিরে। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ স্বাশ কষ্ট সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাঁরা । এছাড়া গুটি আমের ব্যাপক ভাবে নষ্ট হচ্ছে ।
অথচ স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ইটভাটার ও ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চোখে পড়ে না । স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় দিন দিন অবৈধ ইটভাটার বিস্তার হচ্ছে । ইটভাটার মালিকেরা প্রভাশালী হওয়ায় এলাকার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিকট অভিযোগ দিতে ভয় পায় এবং অনেক অভিযোগ দিয়ে এর প্রতিকার পাচ্ছে না বলে জানা গেছে । এই উপজেলায় প্রায় ২৯ টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে বলে জানা গেছে । ইটভাটা গুলিতে বিভিন্ন জাতের গাছ ও তাঁর খড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । বনজ ও ফলজ কোন বৃক্ষ ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোন জ্বালানি কাঠ ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না বলে আইনে আছে । আইনের তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন ইটভাটা গুলিতে বনজ ও ফলজ বৃক্ষ ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে । যা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছেনা ।
আইনে উল্লেখ আছে, অন্যান্য দিকে আপাতত কোন আইনে যা হা কিছু থাকুক বা না থাকুক না কেন , ছাড়পত্র থাকুন বা না থাকুক, আইন কার্যকর হওয়ার পর নিন্মবরণিত এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে কোন ব্যক্তি ইট ভাটা স্থাপন করতে পারবেন না । যথা- (ক) আবাসিক, সংরক্ষিত বা বানিজ্যেক এলাকা । (খ) সিটি কর্পোরেশন , পৌরসভা বা উপজেলা সদর, (গ) সরকারী বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি : (ঘ) কৃষি জমি: ৩, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা: (ঙ) ডিগ্রেডড এয়ার শেড ( Degraded AIR Shed ) । আইন কার্যকর হইবার পর নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপননের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বা অন্য কোন কতৃপক্ষ কোন আইনের অধীনে কোনরুপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স নামে অভিহিতহ হইক প্রদান করতে পারিবে না । (৩) পরিবেশ অধিদপ্তর হইতে ছাড়পত্র গ্রহণ কারী কোন ব্যক্তি নিন্মবরণিত দূরত্বে বা স্থানে ইটভাটা স্থাপন করতে পারিবেন না , যথা- (ক) নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা। হইতে ১(এক) কিলোমিটার দূরত্বে মধ্যে: (খ) বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত, সরকারী বনাঞ্চলের সীমারেখা হইতে ২( দুই) কিলোমিটার দূরত্বে মধ্যে: (গ) কোন পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে বা ঢালে বা তসলগ্ন সমতলে কোন ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে উক্ত পাহাড় বা টিলার পাদদেশে হইতে কয়পক্ষে ১_২(অর্ধ) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে: (ঘ) পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে , পার্বত্য জেলায় পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কতৃপক্ষ নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে : (ঙ) বিশেষ কোন স্থাপনা , রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বা অনুরুপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান হইতে কয়পক্ষে ১(এক) কিলোমিটার মধ্যে: (চ) স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর কতৃপক্ষের ১_২(অর্ধ) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে । (৪) এই ধারা কার্যকর হইয়ার পূর্বে , ছাড়পত্র গ্রহণকারী কোন ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে বা উপ- ধারা (৩) এ উল্লিখিত দূরত্বের মধ্যে বা স্থানে ইটভাটা স্থাপন করিয়া থাকেন, আইনের বিধানবলি অনুসারে যথাস্থানে স্থানান্তর করিবেন, অন্যথায় তাহার লাইসেন্স বাতিল হইয়া যাইবে । ব্যাখ্যা : এই ধারায় – (ক) আবাসিক এলাকা, অর্থ এমন কোন এলাকা যে খানে কমপক্ষে ৫০( পঞ্চাশ) পরিবার বসবাস করে : (খ) জলাভূমি’ অর্থ কোন ভূমি তাহা (৬) বা অদ্দধরব সময় পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে এবং সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষিত : (গ) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা অর্থ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা ৫ এর অধীন ঘোষিত কোন এলাকা: (ঘ) বাগান অর্থ এমন কোন স্থান যে খানে হেক্টর প্রতি কমপক্ষে ১০০(একশত) টি ফলদ বা বনজ বা উভয় প্রকারের বৃক্ষ রহিয়াছে এবং তা বাগান ও উহার অন্তর্ভুক্ত হবে : এবং (ঙ) ব্যক্তিমালিকানাধীন বন অর্থ এমন কোন বন কর্তৃক ব্যক্তি মালিকানাধীন বন হিসেবে স্বীকৃত এবং যাহার গাছ- পালা আচ্ছাদন ( CTown cover) বনের কমপক্ষে ৩০ ( ত্রিশ) ভাগ এলাকায় বিস্তৃত থাকে , এবং সামাজিক বন বা গ্রামীণ বনও উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে । (৫) মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ -(১) আপাতত বলবৎ অন্য আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত ক্রিয়ার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসেবে উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন না । (৬) জ্বালানি কাঠের নিষিদ্ধ , আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারিবেন না ।
এই আইন না মেনে ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে দিনের পর দিন কাঠ ব্যবহার করে যাচ্ছে ইটভাটার মালিকরা । এই ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই যত্র তত্র ভাবে ইটভাটা ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা । এবিষয়ে লালপুর সদর ইউনিয়নের কৃষক নওশেদ আলম বাদশা লিটন বলেন, ইটভাটার ধোয়ার কারনে গুটি আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, ইটভাটার ধোয়ার কারনে আমের বুটার নিচে কালো দাগ দেখা দেয় এবং পচন ধরে । ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জন্য সস্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি ।
এবিষয়ে উপজেলার আব্দুলপুর এলাকার বড়বড়িয়া অবস্থিত বন্ধু ভাটার মালিক খাইরুল ইসলাম বলেন, ভাটার বৈধ কাগজপত্র আছে। সরকার কে নিয়মিত ভ্যাট ও ট্যাক্স দিয়ে ভাটা চলাচ্ছি । এবিষয়ে লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব ইটভার কারনে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে । এবং রবি শস্য ও বিভিন্ন ধরনের ফসল সহ আমের গুটির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে । এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শাম্মী আক্তার বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে ।
আরও দেখুন
বাগাতিপাড়ায় আগুনে পোড়া তিন পরিবার পেল সহায়তা
নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে …