রাশেদুল ইসলাম, লালপুর:
নাটোরের লালপুর উপজেলার চংধুপইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামকে নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্য। অভিযোগ উঠেছে, বিগত দিনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় , আওয়ামী লীগকে নিয়ে উস্কানিমূলক সাম্প্রদায়িক মন্তব্য ও নৌকা পোড়ানোর মতো গুরুতর অপরাধ করার পরও তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
গত রবিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি ) বিকেলে উপজেলার চংধুপইল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে চংধুপইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোজাম্মেল হক মাষ্টারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ও চংধুপইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আল বেলালের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ।
প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাহক আলী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য উপাধ্যক্ষ বাবুল আকতার, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সহ অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফুর সভাপতিত্বে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন সভাপতি পদে মোজাম্মেল হক মাষ্টার ও রেজাউল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট চংধুপইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু।
২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী রেজাউল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হলে উপস্থিত অনেক নেতাকর্মী এর প্রতিবাদ করে সভাস্থল ত্যাগ করেন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান লাভলু বলেন, রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে একসময় আমরা প্রতিবাদ মিছিল করেছি নিজ দলের কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায়। এখন তাকেই দেখছি উপজেলা নেতৃবৃন্দ সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন৷ আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।
লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসকেন্দার মির্জা বলেন, চার্জশিটভুক্ত আসামীকে দলের পদে বসিয়ে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সাথে উপহাস করা হয়েছে। এরকম হতে থাকলে দল বিমুখ হবে দুঃসময়ের কর্মীরা। দ্রুত রেজাউলের অপসারণ দাবী করেন তারা।
গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, ২০০৯ সালের ২৮ নভেম্বর ঈদুল আজহার দিনে সন্ধায় সবার সামনে আব্দুলপুর বাজারে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে হত্যার উদ্দ্যেশে মারাত্মক জখম করেছিল রেজাউল ইসলাম।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ স ম মাহামুদুল হোক মুকুল বলেন, ২০০৩ সালে ৬ই ফেব্রুয়ারি ইউপি নির্বাচনে সরাসরি শহীদ মমতাজ উদ্দীনের সাথে বেয়াদবি করে তার নির্দেশ অমান্য করে ওই সময়ে লালপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক বুলুকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীকে পরাজিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন এই রেজাউল।
অভিযুক্ত রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে এক সময় হয়রানি যারা করেছিলো তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখেই আমাকে হেয় করা হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী বলেন, রেজাউল আওয়ামী লীগের একজন দীর্ঘদিনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। বিএনপি জামাতজোট সরকারের সময় তাকে কারাবরণ ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে এবার সে অপ্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে। সে কখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা উদ্দেশ্য ও আক্রোশ থেকে করা হয়েছে ।