নিউজ ডেস্ক:
আগামী ২৯ ও ৩০ নভেম্বর জাপান সফর করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময়, বড় প্রকল্পে ‘বিনিয়োগ ও অর্থায়নের’ মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপানের ‘শক্তিশালী সম্পৃক্ততা’ চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাপানের সক্রিয় ভূমিকা চাওয়া হবে এই সফরে। গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ বৈঠকটি আগামী ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর নিয়ে বৈঠকটি হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। সফরে বাংলাদেশ জাপানের কাছে বড় অঙ্কের উন্নয়ন সহযোগিতা ও বিনিয়োগ চাইবে বলে জানা গেছে। সেই লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তুতির কাজ চলছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে প্রকল্প সহায়তার বিষয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। বাংলাদেশ জাপানের কাছে বড় অঙ্কের অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট (ওডিএ) ও বিনিয়োগ চাইবে। যদি এ সফরে প্রকল্প সুনির্দিষ্ট করা না যায়, তবে যাতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও দিকনির্দেশনা বজায় থাকে, সেই চেষ্টা হচ্ছে। বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফর নিয়ে আলোচনা করেছি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে গত সোমবার দেয়া মন্তব্য সম্পর্কে বৈঠকে কোনো কথা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, না না, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে গত সোমবার ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসাডর’ অনুষ্ঠানে ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় জাপান। আমি শুনেছি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভোট দিয়ে ভর্তি করে ফেলেছে। এ ধরনের ঘটনা এর আগে অন্য কোনো দেশে ঘটেছে বলে আমি শুনিনি।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশ অর্থায়ন খোঁজার বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, এটা একটা সমস্যা হতে পারে, তবে এটা নির্ভর করে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ রেল প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তি চাই। এটাও একটা সমস্যা হতে পারে। এর সবই আলোচনায় আছে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের ‘সরাসরি ভূমিকা’ চাইবে। কারণ তাদের প্রত্যাবাসন এখনও শুরু হয়নি।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের শুরু দেখতে চান এবং তার দেশ এ লক্ষ্যে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপানি পক্ষ বাংলাদেশের কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করতে আগ্রহী। তবে বাংলাদেশের সাধারণ নীতি হচ্ছে আগে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, আমরা প্রথমে আমাদের জনগণকে খাওয়াতে চাই, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা দিতে চাই। তারপর, আমরা অন্যান্য বিষয়গুলো দেখব। জাপান বাংলাদেশকে একটি ‘দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি’ এবং একটি ‘আকর্ষণীয়’ বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে মনে করে। একটি ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত প্রশান্ত ভারত’ বাস্তবায়নে জাপান বাংলাদেশকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসাবে দেখে। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে ভারতীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কোনো ধরনের ‘অবরোধ ছাড়াই সকলের জন্য ‘মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং চলাচলযোগ্য’ হওয়া উচিত।