নিজস্ব প্রতিবেদক:
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) চালু করার আগে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। এ জন্য সংস্থার ৫টি বিশেষজ্ঞ দল পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে আসবে। আইএইএর গাইড লাইন অনুসরণ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে যথাযথভাবে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম এর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সার্বিক সহযোগিতায় নির্মাণাধীন বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে উৎপাদনে যাবে। সে অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সার্বিক কার্যক্রম এগিয়ে চলছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।
এরইমধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল রাশিয়ায় প্রস্তুতের পর সমুদ্র পথে রূপপুরে আনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পাঁচটি বিশেষজ্ঞ দলের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার অনুমোদনের সাপেক্ষে প্রকল্প চালু হবে। আগামী বছর ২০২১ সালের শুরু থেকে এই প্রকল্পের জ্বালানি লোডের আগ পর্যন্ত টিমগুলো পর্যালোচনা কার্যক্রম চালাবে। এই দলগুলো প্রকল্পের সক্ষমতার দিকগুলো পর্যালোচনা করে মতামত দেবে।
রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম সূত্রে জানা যায়, আইএইএর দলগুলো পর্যায়ক্রমে খতিয়ে দেখবে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা, স্থাপনা ঘিরে জন সুরক্ষা, চুল্লির নিরাপত্তা, পারমাণবিক দুর্যোগে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত পদ্ধতি এবং স্থাপনা সমন্বিত অবকাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। তারা কোন নির্দেশনা দিলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুন যেসব দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সেসব দেশে আইএইএ এমন পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংস্থাটির ৬৪তম সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার জন্য পর্যবেক্ষণ দল পাঠানোর সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র্রের প্রকল্প পরিচালক পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শৌকত আকবর বলেন, আইএইএর রোডম্যাপ অনুযায়ী, এই প্রকল্প নির্মাণ হচ্ছে। আগামী বছর থেকে শুরু করে ফুয়েল লোডিংয়ের আগ পর্যন্ত আইএইএ মূল্যায়ন করবে। আইএইএ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনার আলোকে কতগুলো মিশন এখানে আসবে। প্রকল্পের সক্ষমতা পর্যালোচনা করে পর্যবেক্ষণ দেবে। তারা ইতিবাচক মতামত দিলে এই প্রকল্পের অবকাঠামো নিয়ে, নিরাপত্তা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, সব কিছু ঠিকঠাক মেনে এবং অনুসরণ করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। সারা বিশ্বে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা কাজ করে। কোনো দেশের পারমাণবিক কোনো স্থাপনা নির্মাণে সংস্থাটির ১৯ দফা নীতিমালা মেনে চলতে হয়। সে অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। আইএইএ জাতিসংঘের একটি সংস্থা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এই সংস্থার গাইড লাইন মেনে চলতে হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সবকিছুর জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। নিরাপদ এবং নিরাপত্তার নির্দেশনাগুলো মেনেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণ দলগুলো যে গাইড লাইন দেবে তা কঠোরভাবে অনুসরণ করে এই প্রকল্পটি চালু এবং পরিচালনা করা হবে।
এদিকে আইএইএর সম্মেলনে সংস্থাটির একটি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের একটি ওয়ার্কিং কমিটিতে নিয়োগ পেয়েছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। করোনা ভাইরাসের কারণে সম্মেলনে পরমাণু বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
এই কমিটির কাজের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শৌকত আকবর জানান, এই কমিটি পরমাণু প্রকল্প নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে আইএইএ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য। পারমাণবিক প্রকল্পের অবকাঠামো তৈরিতে যে রোল প্লে করে আইএইএ, তার পরামর্শক হিসেবে কাজ করে এই কমিটি।