নিউজ ডেস্ক:
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মসলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জুটো ফাইবার গ্লাস ইন্ড্রাস্ট্রিজের জমিতে এই ‘ঢাকাই মসলিন হাউজ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় মন্ত্রী এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন বলে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়।
মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প এবার সরকারের জনপ্রশাসন পদক পেয়েছে। এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের জন্যই বৃহস্পতিবারের সভার আয়োজন করা হয়।
গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, মসলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপুল সংখ্যক লোকের, বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
শিগগিরই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় আবার মসলিনকে যুক্ত করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ঢাকাই মসলিন রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
“অচিরেই বাংলাদেশের অন্যতম ব্র্যান্ডিং হবে ‘ঢাকাই মসলিন’। সোনালী ঐতিহ্যের ঢাকাই মসলিন আবারও মাতাবে বিশ্ব।”
গবেষকদের মতে, আড়াইশ কাউন্টের (২৫০ মিটার সুতার ওজন হবে ১ গ্রাম) চেয়ে মিহি সাদা সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি করা হত শত বছর আগে। রাজ পরিবারের মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই শাড়ি বোনা হতো কার্পাসের সুতায়।
সেজন্য এক সময় বৃহত্তর ঢাকার মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীর সংলগ্ন অঞ্চলে হতো ফুটি কার্পাসের চাষ। সেই সুতা তৈরি হত নদীতে নৌকায় বসে, আর্দ্র পরিবেশে।
ব্রিটিশ শাসনামলে কল-কারখানা থেকে সাশ্রয়ী কাপড় আসায় একসময় হারিয়ে যায় দীর্ঘ সময় নিয়ে মসলিন তৈরির তাঁত ও সুতা।
সেই সুতা ফিরিয়ে আনতে সরকার ১২৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় ২০১৬ সালে।
কথিত আছে, ৮০০ কাউন্টের সুতায় বোনা পুরো একটি মসলিন শাড়ি একটি ম্যাচের বাক্সে ভরে ফেলা যেত।
ইতিহাসের বইয়ে সর্বোচ্চ ১২০০ কাউন্টের সুতার মসলিনের কথা আছে এবং সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ ধরনের মসলিন ঢাকায় তৈরি হত এক সময়।
রূপগঞ্জের এক কারিগরের বানানো ৩০০ কাউন্টের সুতার দুটি শাড়ি ২০১৬ সালে জাতীয় যাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়। বারো হাত ও সাড়ে বারো হাত দৈর্ঘ্যের শাড়ি দুটির বেড় ছিল ৪৭ ইঞ্চি।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, “বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য ও বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধার করে হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাপক অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে মসলিনের কাঁচামাল ফুটি কার্পাস খুঁজে বের করা, ফুটি কার্পাসের চাষাবাদ, সুতা উৎপাদন, কারিগরদের দক্ষতা উন্নয়ন করে উন্নতমানের মসলিন উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।”
গত ১৭ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ঢাকাই মসলিনকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে জিআই নিবন্ধন সনদ দেয়।