নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে প্রথম ঋণ পেল পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা দেয়া হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরোয়।
১০ বছর মেয়াদে এই ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এর মধ্যে তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড। সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশি টাকা দিয়ে ইউরো কিনে এই ঋণ দেবে। মোট ১১ কিস্তিতে দেয়া হবে অর্থ। প্রথম কিস্তির অর্থ দেয়া হবে এই মে মাসেই।
এই ঋণের বিপরীতে সুদ দিতে হবে ২ শতাংশ। এর মধ্যে ১ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক ও ১ শতাংশ সোনালী ব্যাংক পাবে। ২০৩১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে পায়রা বন্দর। প্রতিবছর চার কিস্তি হিসেবে মোট ৪০ কিস্তিতে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সোনালী ব্যাংক ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পাবক) মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি ঋণচুক্তি সই হয়েছে।
এই টাকা দিয়ে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং সম্পন্ন করা হবে। এটি হলে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার মেট্রিক টনের জাহাজ বিভিন্ন দেশ থেকে এই বন্দরে ভিড়তে সক্ষম হবে এবং বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে।
সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান এবং পায়রা বন্দরের পক্ষে চেয়ারম্যান কমোডর হুমায়ুন কল্লোল ঋণচুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে আতাউর রহমান প্রধান পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে এই ঋণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দিতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
পাবক চেয়ারম্যান কমোডর হুমায়ুন কল্লোল বলেন, পায়রা বন্দর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সদস্য এম এম মামুনুর রশীদ, কমোডর রাজীব ত্রিপুরা, কমান্ডার রাফিউল হাসান, পাবক কনসালটেন্ট শেখ মাহামুদুল হাসান, প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামানসহ দুই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গত ১৫ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, সোনালী ব্যাংক এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক ত্রিপক্ষীয় ঋণচুক্তি সই হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই সোনালী ব্যাংক এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি সই হয়েছে বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতের অর্থ বিনিয়োগে নিয়ে আসার আলোচনা চলছিল। বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগও নেয়া হয়; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত রিজার্ভের অর্থ দিয়ে দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি তহবিল গঠন করেছে সরকার। এটির নাম বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ)।
গত ১৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিআইডিএফের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
আপাতত বিদ্যুৎ খাতে ও বন্দর উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে এই তহবিলের অর্থ। তহবিলটির বার্ষিক বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
এই তহবিলের প্রথম ঋণই পাচ্ছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
২০১৩ সালে পটুয়াখালী জেলার রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দর নামে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের উদ্বোধন করা হয়।
সে সময় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির যে কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয় তাতে বলা হয়েছিল, ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে কনটেইনারবাহী কার্গো পরিবহনের চাহিদা হবে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। আর খননের মাধ্যমে রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত করা সম্ভব।
‘এর ফলে বিপুলসংখ্যক বিদেশি জাহাজ এই বন্দরে আসবে এবং দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা সংযোজিত হবে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানেও ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
রিজার্ভ ৪৪.৫ বিলিয়ন ডলার
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এখন সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
গত ২৮ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। কিন্তু ৪ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
গত কয়েক দিনে তা আবার বেড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।