শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রাম উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন

রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রাম উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন

নিউজ ডেস্ক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তার অন্যতম ছিল গ্রামে বসবাসকারী ৮০ শতাংশ মানুষের উন্নয়নে নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি বাংলার প্রত্যন্ত এলাকায়ও সফর করেছেন। নিজ চোখে গ্রাম এবং মানুষের দুর্দশার চিত্র দেখেছেন। তাই গ্রাম উন্নয়নের স্বপ্টম্নকে তিনি মনেপ্রাণে লালন করতেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু তার গ্রাম উন্নয়নের দর্শনকে অঙ্গীকার আকারে যুক্ত করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। সোনার বাংলা বিনির্মাণে গ্রাম উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে তার গৃহীত উদ্যোগ ও স্বপ্টেম্নর বাস্তবায়ন থেমে থাকে দীর্ঘ ২১ বছর।

বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যেও গ্রাম উন্নয়নের চিন্তা দারুণভাবে ক্রিয়াশীল। তার লেখনীতে যেমন এমন অভিব্যক্তির প্রকাশ দেখা যায়, তেমনি সরকার পরিচালনায় নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের মধ্যেও এর বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। ‘গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কিছু কথা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘গ্রামকেই করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু’। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নে নগর এবং গ্রামের বৈষম্য দূর করায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে প্রেরণাদায়ী কর্মসূচি ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন শুরু করেন গ্রাম থেকে ‘বটম আপ অ্যাপ্রোচ’ পদ্ধতি অনুসরণ করে।

নগর এবং গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য দূর, গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধন এবং মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর তিনি কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিজিটাল উপকরণে সমৃদ্ধ চার হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের (ইউআইএসসি) উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেদিন ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর কুকরিমুকরি থেকে ইউএনডিপির প্রশাসক ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হয়ে এমন একটি অনন্য ঘটনার সাক্ষী হন। ২০১৪ সালে ইউআইএসসির নাম পরিবর্তন করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) রাখা হয়। ইউডিসি প্রতিষ্ঠার পথ ধরেই দেশের পৌরসভা, মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন, ওয়ার্ডসহ ছয় হাজার ৬৮৬টিরও বেশি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

শুধু ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকেই দেড়শরও বেশি সেবা দেওয়া হচ্ছে মানুষকে। প্রতিমাসে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ জমির পর্চা, জন্মনিবন্ধন সনদ, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবাসহ দেড়শরও বেশি সেবা অনলাইন এবং অফলাইনে গ্রামের মানুষ পাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। যেমন আগে গ্রামের একজন সেবাগ্রহীতাকে জেলা শহর থেকে জমির পর্চা সংগ্রহ করতে তিন সপ্তাহ বা তারও বেশি সময়ে ৩-৪ হাজার টাকা ব্যয় হতো। এ টাকার একটি অংশ ছিল ঘুষ। সেই সেবাটি গ্রামের সেবাগ্রহীতা সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে (মোবাইলে খুদেবার্তায় সেবাটি সরবরাহের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়) বাড়ির পাশে ইউনিয়ন থেকে মাত্র ৮০ টাকায় পাচ্ছেন।

গ্রামে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের কাজ এতটা সহজ ছিল না। ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের স্থানীয় চেয়ারম্যানদের অসহযোগিতা, মাঠ প্রশাসন বিশেষ করে ইউএনওদের তদারকি ও উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল লিটারেসির অভাবসহ নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে ইউডিসি প্রতিষ্ঠার মতো কঠিন কাজটিই ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্বীকার করতেই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প প্রণয়নে খ্যাতিমান তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়কে সম্পৃক্ত করা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত ছিল দূরদর্শী ও সুবিবেচনাপ্রসূত। শেখ হাসিনা শহরের মতোই গ্রামে তথ্যপ্রযুক্তির সব সুবিধা নিশ্চিত করার কাজটি বেশ সাফল্যের সঙ্গেই করছেন। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, সেসব এলাকায় আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মাধ্যমে সোলার প্যানেল বসিয়ে এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন করে ইউডিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার মতো এমন একটি চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও প্রশংসা কুড়ায়। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত করে। বর্তমান সরকারের সর্বশেষ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০২১) অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ সেবার আওতা বাড়ানোসহ ২৪টি খাতের সূচকের উন্নয়নের মূলে গুরুত্ব পায় গ্রাম ও গ্রামের মানুষের উন্নয়ন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রাম-শহরের সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তিই হচ্ছে অন্যতম হাতিয়ার।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ডিভাইড হ্রাসের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। নানা উদ্যোগের বাস্তবায়নও করা হচ্ছে। কিন্তু গ্রামের এবং প্রান্তিক মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষকে ডিজিটালি লিটারেট করা। আশার কথা হচ্ছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বেশ জোরেশোরেই ডিজিটাল লিটারেসির কথা বলছেন। সেইসঙ্গে আরও দুটি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, মোবাইল ডাটার দাম কমানো। দ্বিতীয়ত, সবার কাছে ইন্টারনেট সহজলভ্য করা। তাহলেই বাংলাদেশে ডিজিটাল ডিভাইড আরও কমে আসবে।

আরও দেখুন

পিরোজপুরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে দিনব্যাপীপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ঢাকা: মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে পিরোজপুরের …