নিজস্ব প্রতিবেদক, রাণীনগর:
নওগাঁর রাণীনগরে দীর্ষদিন ধরে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা ধান চাষে অভ্যস্ত হওয়ায় স্থাণীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে চাষ যোগ্য জমিতে ফসলের বৈচিত্র আনার লক্ষ্যে ধান চাষের পাশাপাশি অল্প সময় ও কম খরচে ভাগ্য বদলের চেষ্টা হিসেবে মরিচ চাষের দিকে অগ্রসর হয়েছিলো চাষীরা। কিন্তুু দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে লাগাতার বৃষ্টিপাতের ফলে মরিচের গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যাওয়ায় ফলন বিপর্যয়ের কারণে চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। মরিচ মশলা জাতীয় ফসল হওয়ায় খেতে গেলে মুখে ঝাল লাগলেও এই মরিচই উৎপাদন করে লাভবান হওয়ায় স্বপ্ন দেখছিলো এখানকার চাষীরা। গত মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হলেও লাগাতার বৃষ্টির কারণে গাছগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে চাষীরা এখন কষ্টে আছে। এবছর মরিচের দাম ভালো থাকায় লাভের আশা করলেও তা হতাশায় পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহে রাণীনগরে বিভিন্ন হাটবাজারে কাঁচা মরিচ ২’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ঈদুল আযাহার পর বাজার দর কিছুটা কমের দিকে। বাজার দর ভালো থাকলেও আশানূরুপ ফলন না পাওয়ায় ক্ষতির আশংকায় চাষীদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৫টি ইউনিয়নে চাষিরা পরীক্ষামূলক ভাবে ধান চাষের পাশাপাশি মরিচ চাষ শুরু করেছে। গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে মরিচ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে বন্যার কারণে হঠাৎ করে প্রতি কেজি মরিচ কাঁচা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত খুরচা বিক্রি হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছিল। রাণীনগর উপজেলায় স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বাঁশগাইয়া, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টার, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের মরিচ আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার উঁচু শ্রেণীর দোঁআশ পলি মাটিতে মরিচের ভাল ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় চাষিরা দিনদিন মরিচ চাষে মনোযোগ দিচ্ছে। পারিবারিক প্রয়োজনে বাড়ির আশেপাশে চাষ যোগ্য জমিতে মরিচ চাষ শুরু হলেও ধীরে ধীরে বানিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য মরিচ চাষ করছে চাষীরা। অল্প জমিতে বেশি ফলন এবং অধিক মুনাফা পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে মরিচ উৎপাদনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হলেও বাধসাজে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। চলতি মৌসুমে লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে গাছগুলো হলুদ বিবর্ণ হয়ে মরে যাওয়ায় ফলন বিপর্যয়ে চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
উপজেলার দূর্গাপুর মিনা পাড়া গ্রামের সখিন মিনার ছেলে মরিচ চাষী আজাহার আলী জানান, আমি নিয়মিত ভাবে ধান চাষের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে মরিচ চাষ করছি। এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে মরিচের গাছগুলো লালবর্ণ হয়ে মরে গেছে। ফলন বিপর্যয়ে কারণে চরম ক্ষতির সমূখীন হতে হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, রাণীনগরে প্রতিটি ইউনিয়নেই চাষিদের ধান চাষে বেশি আগ্রহ। একই জমিতে বারবার ধান চাষ হলে জমির উর্বরতা কিছুটা কমে যায়। মাটির বৈচিত্র ও উর্বরতা রক্ষায় চাষিদেরকে আমরা পরিবর্তনশীল এবং লাভজনক ফসল চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। যার ফলে চাষিরা ধানের পাশাপাশি মরিচ চাষ করছে। এই মশলা জাতীয় ফসল চাষ করে উপজেলার প্রায় ৫টি ইউনিয়নের চাষিরা লাভবান হয়েছে। তবে লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে মরিচ চাষীদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে যাবতীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।