পদ্মা সেতু ঘিরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আরও একটি উপশহর করতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। এখানে পরিকল্পিত আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় তারা। ইতিমধ্যে ডিপিপি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। রাজউক বলছে, পদ্মা সেতু ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণের কারণে কেরানীগঞ্জে দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। যার কারণে জলাধার সংরক্ষণ, অবৈধ দখল প্রতিরোধ ও বিচ্ছিন্নভাবে নগরায়ণকে নিরুত্সাহিত করতে জলকেন্দ্রিক একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে রোডের পাশে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় বাস্তা ইউনিয়নে ৪ হাজার ৭০০ একর ভূমি নিয়ে গড়ে উঠবে উপশহরটি। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এবার আর প্লট আকারে না দিয়ে, ব্লকভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে এককভাবে কাউকে প্লট না দিয়ে এক বিঘার প্লট চার জন বা অধিক লোককে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
উপশহরে হবে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্র্রিজ, ওয়্যার হাউজ ও ব্যাংকপাড়া। উপশহরটিতে সাড়ে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এক একটি ভবনের উচ্চতা হবে কমপক্ষে ২০তলা। প্রকল্প এলাকায় ২০ শতাংশ জায়গা রাখা হয়েছে গ্রিন স্পেস ও জলাভূমি হিসেবে। এছাড়া মাঠ, বাজারসহ সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে এখানে। এই উপশহরকে বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায় রাজউক। রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ঘোষণার পর এটিই প্রথম ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন করে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহর গড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের অর্থের জোগান নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে চায় তারা। সেটি সম্ভব না হলে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় কাজ করার চিন্তাভাবনা করছে সংস্থাটি। প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর থেকে সাত বছরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় রাজউক। এজন্য দেশি বড় বড় আবাসন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে পারে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিজও দিতে পারে। বর্তমানে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্তের কাজ চলছে। আগামী ছয় মাস পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতু। ছবি: আব্দুল গনি
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি এখানে উদ্যোগ না নেয়, তাহলে অপরিকল্পিতভাবে এখানে নগরায়ণ হবে। ঘিঞ্জি এলাকা গড়ে উঠবে। তাই সরকারিভাবে আমরা পরিকল্পিতভাবে করার উদ্যোগ নিচ্ছি। ঢাকা শহরে আমরা যে আবাসিক প্রকল্পগুলো করেছি এগুলো বেশির ভাগই আবাসনকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এই প্রকল্পে আমরা কিছু জিনিসকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এর মধ্যে ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স। এখানে ৪০০ একর জায়গায় একটি পার্ক তৈরি করা হবে। অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্র্রিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মিশ্র আকারের একটি প্রকল্প হবে এটি। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এখানে। এছাড়া সারা দেশের সঙ্গে সংযোগ রেখে সার্কুলার রোড নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।