রবিবার , নভেম্বর ২৪ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / রফতানি আয় রেমিটেন্সে রেকর্ড ॥ অর্থনীতিতে সুবাতাস নতুন বছরে

রফতানি আয় রেমিটেন্সে রেকর্ড ॥ অর্থনীতিতে সুবাতাস নতুন বছরে

নিউজ ডেস্ক:
করোনা মহামারীর মধ্যে গত বছর সবচেয়ে ভাল অবস্থানে ছিল রফতানি আয়। বছরজুড়েই রফতানি আয় ছিল উর্ধমুখী। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ডিসেম্বরে রফতানি আয় গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য রফতানি থেকে এত বেশি বিদেশী মুদ্রা দেশে আসেনি। রফতানির পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকেও স্বস্তি ছিল। যদিও গত কয়েক মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে বা বৈধ পথে প্রবাসীদের পাঠানো আয় কমছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই আয়। বছরের হিসাবে দেশে রেকর্ড ২২ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স আসে দেশে। অন্যদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর দেশে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার বন্যা বইতে শুরু করেছে। প্রতি মাসেই আমদানিতে রেকর্ড হচ্ছে। এছাড়া বিদেশী ঋণসহায়তার ক্ষেত্রে ভাল একটা বছর পার করল বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি চোখ রাঙালেও এখনও সহনীয় পর্যায়েই আছে। ভয় এখন শুধু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে। এটাকে সামাল দেয়া গেলে আর পেছনে তাকাতে হবে না, দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। 

রাজনৈতিক স্থিতির সঙ্গে মহামারীর খাদ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২১ সাল। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউকে সঙ্গী করে ২০২১ সালে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। তবে বছরের শেষ দিকে এসে করোনার ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে বেশ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আর এ কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) পূর্বাভাস নিয়ে সব সময় ‘রক্ষণশীল’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগের হিসাব থেকে সরে এসে বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। জানতে চাইলে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ একটাই, ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি। ওমিক্রন ভালভাবে সামাল দিতে না পারলে অর্থনীতি ফের নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’ তবে আশার কথা হলো, পৌনে দুই বছরের মহামারী যতটা বিপদে বাংলাদেশকে ফেলবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন পদক্ষেপে তা অনেক ক্ষেত্রে এড়ানো গেছে। দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে। জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ঠিক জায়গায় আছে, ভাল অবস্থানে আছে। আমাদের অর্থনীতি অনেক অনেক বেশি ভাল অবস্থানে। যেটা কেউ চিন্তা করতে পারেনি। আমরা বিশ্বাস করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পণ্য রফতানি, প্রবাসী আয় ও রাজস্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ও বেসরকারী খাতে কর্মসংস্থান, সরকারী ব্যয় ও মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থায় একটি স্বস্তির জায়গা তৈরি হবে। তবে মূল্যস্ফীতি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ও বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে।

সর্বোচ্চ রফতানির মাইলফলক ॥ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে সদ্যসমাপ্ত ডিসেম্বরে রফতানি আয় গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য রফতানি থেকে এত বেশি বিদেশী মুদ্রা দেশে আসেনি। এর আগে একক মাসে সর্বোচ্চ আয় এসেছিল গত অক্টোবরে, ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাবে প্রায় ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ কোটি) ডলার রফতানি আয় দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। রেকর্ড এই রফতানির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। গত মাসে ৪০৪ কোটি ডলারের বা ৩৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার পোশাক রফতানি করা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ১১৬ কোটি ডলারের নিট পোশাক রফতানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ৮৭৪ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে রফতানি বেড়েছে সাড়ে ২৪ শতাংশ। পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান রফতানি আয়ের এই উল্লম্ফনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, সত্যিই আমরা খুশি। এত দ্রুত করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব, ভাবতে পারিনি। ‘তবে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আমাদের নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জানি না, কী হবে। যদি ওমিক্রন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের রফতানি আবার থমকে যাবে। আর যদি, তেমনটা না হয়, তাহলে এই ইতিবাচক ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এর মধ্যে পণ্য রফতানি থেকে আয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলার।

ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেমিটেন্স আয় ॥ মহামারী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা ও নানা সঙ্কটের কারণে টানা ছয় মাস কমেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। তারপরও সদ্য সমাপ্ত বছরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশে। ২০২১ সালে রেকর্ড দুই হাজার ২০৭ কোটি মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে কোন বছর এত বেশি রেমিটেন্স দেশে আসেনি। তবে একক বছরে রেমিটেন্স বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিডের কারণে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন। এছাড়া করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশে টাকা পাঠানোর অবৈধ চ্যানেলগুলো বন্ধ ছিল। তাই বাধ্য হয়ে সবাই ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়েছেন। ফলে গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রেমিটেন্স প্রবাহ বেশি ছিল। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যাতায়াত বাড়ছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া জমানো টাকা না পাঠিয়ে অনেকে আবার জমাতে শুরু করেছেন। আবার সশরীরে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন। ফলে গত বছর শেষ ছয় মাসে বৈধ পথে রেমিটেন্স কমেছে। এদিকে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে টানা ছয় মাস রেমিটেন্স প্রবাহ কমায় নতুন বছর থেকে এটি আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর করা হয়েছে।

রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৫.৩৪ শতাংশ ॥ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এই সময় শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৭৩ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৮৭ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। পরের মাসে তা ১৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর সেপ্টেম্বর থেকে নবেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে। তবে ওমিক্রন দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। জুলাই-নবেম্বর সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। এই খাতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এরপরে আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক, ভ্যাটসহ অন্যান্য কর আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। আর আয়কর আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা।

পণ্য আমদানিতে রেকর্ড ॥ চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) ৩৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি। করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর দেশে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার বন্যা বইতে শুরু করেছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ নবেম্বর মাসে ৮১০ কোটি ৭০ লাখ (৮. ১০ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিপুল অঙ্কের বিদেশী মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি। এর আগে গত অক্টোবর মাসে ৭৪২ কোটি ১৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ছিল এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) ৩৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৫৪২ কোটি ৯২ লাখ) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূলধনী যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ২৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, বেড়েছে ২১ দশমিক ০২ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৩০৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যান্য শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৯৪৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের, বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করায় সে সব দেশের মানুষ আগের মতো পণ্য কেনা শুরু করেছিল। দেশের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। সে চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন উদ্যমে উৎপাদন কর্মকা-ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সে কারণেই শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গিয়েছিল, বেড়েছিল এলসি খোলার পরিমাণ। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে বলে জানান তারা।

দুই অঙ্কের ঘরে বেসরকারী ঋণের প্রবৃদ্ধি ॥ তলানিতে নামার পর বেশ ভালই গতিতে ফিরেছে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারী খাতের ঋণপ্রবাহ। টানা ছয় মাস ধরে বাড়তে বাড়তে দুই বছর পর নবেম্বরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট, ১০ শতাংশের ওপরে) ঘরে পৌঁছে করোনা মহামারীর আগের অবস্থায় ফিরেছে। নবেম্বর মাসে বেসরকারী খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি অক্টোবরের চেয়ে দশমিক ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠেছে। এর অর্থ হলো, গত বছরের নবেম্বরের চেয়ে এই নবেম্বরে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন। আগের মাস অক্টোবরে বেসরকারী খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। করোনা মহামারীর ধাক্কায় কমতে কমতে গত মে মাসে বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি একেবারে তলানি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে। এর পর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে নবেম্বরে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে। তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে রয়ে গেছে এই সূচক।

বিদেশী ঋণে স্বস্তিতে সরকার ॥ বিদেশী ঋণে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। গত দুই অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণসহায়তা পাচ্ছে সরকার। এতে করোনা মহামারীকালেও সরকারকে অর্থসঙ্কটে পড়তে হয়নি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) বাংলাদেশের অনুকূলে ৩০৮ কোটি ৯৫ লাখ (৩.০৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে দাতারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ২৬ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর সময়ে ১৯৯ কোটি ৭৯ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এ হিসাবে এই চার মাসে বিদেশী ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি নিয়েই বড় উদ্বেগ ॥ গত বছরের জানুয়ারিতে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বছর শুরু হয়। পরের ছয় মাস কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পরের পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি টানা বেড়েছে। সর্বশেষ নবেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তবে বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি উর্ধমুখী। করোনার ধকল কাটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে টাকা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় দেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম বেড়েছে। ফলে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে কাজ হারানো মানুষও কাজ পেতে শুরু করেছেন। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে।

আরও দেখুন

নাটোরে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে মারধর ভিডিও ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক বড়াইগ্রামে,,,,,,,,,,নাটোরের বড়াইগ্রামে এক স্বামীকে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সামনে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে …