নিউজ ডেস্ক :
ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে বিশেষ উদ্যোগ
আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে রপ্তানিমুখী খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে নগদ সহায়তার ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হবে। শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন এবং বেতনভাতা পরিশোধে এটি সরকারের বিশেষ উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে। পোশাকখাতসহ অন্যান্য রপ্তানিখাত থেকে সম্প্রতি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা চেয়ে অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়।
এর আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত নগদ সহায়তা বা প্রণোদনার অর্থ ছাড়করণে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন রপ্তানিখাতের উদ্যোক্তারা। কোরবানি ঈদের ছুটির আগেই যাতে শ্রমিকরা বেতন-ভাতা ও বোনাস পান সেজন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নগদ সহায়তার অর্থছাড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুরোধ সংবলিত চিঠি দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। আশা করা হচ্ছে, কোরবানির আগে ২ হাজার কোটি টাকার নগদ সহায়তা পাবেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা।
জানা গেছে, রপ্তানির বিপরীতে সরকারের কাছে ক্যাশ ইনসেনটিভ বা নগদ প্রণোদনার প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি কারখানার মালিকদের। এ ছাড়া কৃষিজাত পণ্য, প্লাস্টিক, চামড়া, মৎস্যসহ আরও অন্তত ৪৪টি খাতের উদ্যোক্তারা রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
এই টাকার বেশির ভাগ অর্থ রোজার ঈদ এবং কোরবানির সময় ছাড় করে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়। শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কোরবানির ছুটির আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও উৎসব বোনাস পরিশোধে রপ্তানিকারকদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়া হয় সেই অর্থ দ্রুত ছাড়ের বিষয়েও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আসন্ন কোরবানি ঈদের ছুটির আগেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য কারখানা মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের দাবির মুখে নগদ ও প্রণোদনার অর্থ সহায়তা প্রদানে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, কোরবানির আগে রপ্তানিখাতের উদ্যোক্তারা নগদ সহায়তা ও প্রণোদনার অর্থ পাবেন।
এতে করে আশা করছি, কোরবানির আগেই সকল কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা হবে। তিনি বলেন, রোজার ঈদের আগেও মালিকপক্ষ নগদ সহায়তা পেয়েছেন। এবারও আশা করছি ২ হাজার কোটি টাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, নগদ সহায়তা ও প্রণোদনার অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুকূলে ছাড় করবে অর্থমন্ত্রণালয়। নগদ সহায়তা বা প্রণোদনার টাকা কোন শিল্পখাত পাবে, কত হারে পাবে তা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে উদ্যোক্তারাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে নগদ সহায়তার অর্থ প্রদান করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পোশাক খাতের দুই সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নেতারা ইতোমধ্যে নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন। সেই চিঠিতে কোরবানির ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে উদ্যোক্তারা আন্তরিক এবং চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ নানা সংকটের মুখে এ খাত এখন চাপের মুখে রয়েছে।
এ পরিস্থিতি নগদ সহায়তা বা প্রণোদনার অর্থ দ্রুত ছাড় করা হলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব হবে তারা মনে করেন। এদিকে, নগদ সহায়তার অর্থ দ্রুত ছাড়ে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি সশরীরের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি এসএম মান্নান কচি ও সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ।
এ প্রসঙ্গে এসএম মান্নান কচি জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানির ঈদের আগে সব শ্রমিকরা যাতে বেতন-ভাতা পান আমরা সেই চেষ্টা করছি। যেসব কারখানা ঝুঁকির মুখে রয়েছে কিংবা যেখানে শ্রম অসন্তোষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেইসব কারখানার দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকারের কাছে নগদ সহায়তা বা প্রণোদনার অর্থ ছাড়ের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করছি, কোরবানি ঈদের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ সহায়তার অর্থ পাবেন উদ্যোক্তারা।
উল্লেখ্য, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গত রোজার ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন কারখানাগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় ৪১৬টি কারখানার নাম উঠে আসে। তালিকা অনুযায়ী, সেখানে বিজিএমইএর ১৭১ সদস্য কারখানা, বিকেএমইএর ৭১ এবং বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের ২৯টি সদস্য কারখানা রয়েছে। বাকি কারখানাগুলো অন্যান্য খাতের।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেতন-বোনাস নিয়ে কিছু কারখানায় শ্রম অসন্তোষের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। রোজার ঈদের মতো এবারও চার শতাধিক কারখানায় বেতন- বোনাস পরিশোধ নিয়ে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তবে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পাওয়া এবং নগদ সহায়তা ও প্রণোদনার অর্থ পাওয়ায় সেই সময় বেশ ভালোভাবেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছিল। এবারও আশা করা হচ্ছে, বেতন-ভাতা নিয়ে ভালোভাবে কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে পারবেন শ্রমিকরা।
বর্তমানে দেশে রপ্তানিমুখী সক্রিয় পোশাক কারখানার সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। গত ডিসেম্বর থেকে এ খাতে নতুন মজুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্যদিকে, পোশাক মালিকদের দাবি, নতুন কস্ট অব প্রোডাকশন (উৎপাদন ব্যয়) অনুযায়ী, বেশিরভাগ বিদেশী ক্রেতা পোশাকের দর বাড়াননি। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে চাপের মুখে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বাড়তি চাপ রয়েছে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। কারখানা মলিকরা বলছেন, টিকে থাকার সংগ্রাম করছে দেশের শিল্পকারখানা। কঠিন সময় পার করছে রপ্তানি খাত। অধিকাংশ কারখানা ৫০-৬০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। ফলে রপ্তানি করে মাস শেষে শ্রমিকের বেতনের অর্থসংস্থান করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আবার যা রপ্তানি হচ্ছে, সেই অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করছে না বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ জুন মাসে বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের বড় চাপ আছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থ বিভাগের বিশেষ সহায়তা ছাড়া এ চাপ সামলে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা।