নিউজ ডেস্ক:
কৃষিভিত্তিক জেলা দিনাজপুরে ধান, লিচু, ভুট্টাসহ কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। অধিকাংশ এক ফসলি জমি এখন দুই বা তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে রেকর্ডও গড়েছে দিনাজপুর। কিন্তু এ জেলার ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান দিনাজপুর টেক্সটাইল মিল এরই মধ্যে লোকসানসহ নানা সমস্যায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়েছে সেতাবগঞ্জ চিনিকলে আখ মাড়াই। যদিও চিনিকলের জায়গায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
তবে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ এ অঞ্চলের মানুষের আশার আলো জাগিয়েছে দিনাজপুরে ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ হওয়ার খবরে। আর এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহজ শ্রম পাওয়ার সুবিধায় শিল্পায়নে ব্যাপক বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে এ অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সহজে আনা সম্ভব। এ ছাড়া উৎপাদিত পণ্য দেশের যে কোনো স্থানে প্রেরণের সহজ ব্যবস্থা রয়েছে। এ স্থান থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর এবং চালুর প্রক্রিয়াধীন বিরল স্থলবন্দরের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এসব স্থলবন্দর দিয়ে যে কোনো উৎপাদিত পণ্য সহজে ভারত ও নেপালে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যার মাধ্যমে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক দিনাজপুর গড়ে উঠবে। ২০১৭ সালে দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রকে ‘গম ও ভুট্টা ইনস্টিটিউট’ হিসেবে উন্নীত করা হয়। ইতিমধ্যে এ ইনস্টিটিউট থেকে কয়েকটি নতুন প্রজাতির গম ও ভুট্টাবীজ আবিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি দেশের কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। কর্মসংস্থান ও পণ্য উৎপাদন বাড়াতে দিনাজপুরের পুলহাট বিসিক শিল্পনগরী ছাড়াও কৃষিজাত পণ্যভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিসিক দিনাজপুরের উপমহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা খাতুন জানান, দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় ৫০ একর জায়গায় বিসিক এক্সটেনশন করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন তা প্রক্রিয়াধীন। কাহারোলের গড়নুরপুর মৌজায় চিনিকলের কান্তা ইক্ষু ফার্মের ১৯.৬১ একর এবং ব্যক্তিমালিকানার ৩০.৩৭ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য বিদ্যুৎ, যাতায়াত ও পানির সুবিধা রয়েছে। এটি কৃষিজাত পণ্যভিত্তিক শিল্পনগরী হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এতে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এ অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা জানান, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে (আর-৫৮৫) নয়টি প্যকেজের মাধ্যমে ১০৬ কিলোমিটার প্রশস্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে। মহাসড়কটি ৫ দশমিক ৫ মিটার থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭ মিটার প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ রাস্তায় নতুন করে ১০০ কালভার্ট ১২ দশমিক ২০ মিটার প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। রাস্তার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮৩ কোটি টাকা। তবে এ মহাসড়কটিকে ফোর লেন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা যায়। ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এ মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে দিনাজপুরের দশমাইল থেকে শহরের মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার হিলি স্থলবন্দর সংযোগ সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।