নিউজ ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদকে অবহিত করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এ সময় রাষ্ট্রপতির কাছে ভোটের বেশ কয়েকটি তারিখ উপস্থাপন করেছে কমিশন। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সিইসি বলেন, ‘দ্রুত আমরা তফসিল ঘোষণা করব, কারণ সময় হয়ে গেছে। আর নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা বলেছি, প্রথম সপ্তাহে বা দ্বিতীয় সপ্তাহে, আমরা এখনো ওই অবস্থায় আছি। আমরা বসে চূড়ান্ত যখনই করব, আপনাদের অবহিত করব।’ নির্বাচন কমিশন যে সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ‘বদ্ধপরিকর’, তা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার কথাও সিইসি বলেন। ইসিসূত্র জানিয়েছেন, ১৪ বা ১৫ নভেম্বর সিইসি বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন। এর আগে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভায় ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ ও আগামীকাল ডিসি-এসপিদের নিয়ে নির্বাচনি কর্মশালা করবে কমিশন। ১২ নভেম্বর বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস উদ্বোধন করবে কমিশন। ইসিসূত্র জানিয়েছেন, তফসিল নিয়ে এবারে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা রয়েছে ইসির। বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবারও তফসিল পরিবর্তনের চিন্তা রাখা হচ্ছে। এজন্য ভোটের বেশ কয়েকটি তারিখ চিন্তায় রেখেছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ তথা ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ রাখা হতে পারে। তবে এ তারিখ আবার পরিবর্তন হতে পারে। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের তারিখ হিসেবে জোর আলোচনায় রয়েছে ২, ৩, ৭, ৮, ৯ বা ১১ জানুয়ারি। তবে সব নির্ভর করছে কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভার ওপর। কমিশন সভায় নতুন তারিখও নির্ধারণ হতে পারে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের বিধান অনুযায়ী এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। সে হিসেবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। সেজন্য নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তফসিল আসতে পারে বলে এর আগে কমিশনের তরফে আভাস দেওয়া হয়েছিল।
তফসিলের আগে সার্বিক বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার আনুষ্ঠানিকতা সারতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে রওনা দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং চার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান। দুপুর ১২টায় তাঁরা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন এবং প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁদের বৈঠক চলে। পৌনে ১টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের আসার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে যে প্রস্তুতি গৃহীত হয়েছে তা অবহিত করা। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি অবহিত করেছি। উনি শুনেছেন, সন্তুষ্ট হয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আশা ব্যক্ত করেছেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সুন্দর সুষ্ঠু হবে, সুশৃঙ্খভাবে হবে, এ ব্যাপারে উনার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উনি আশ্বাস দিয়েছেন, আমরাও বলেছি, প্রয়োজনে আমরাও আপনার সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করব।’
সিইসি বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে যে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা দিতে তিনি সদা প্রস্তুত থাকবেন। তিনি বলেছেন গণতান্ত্রিক যে ধারাবাহিকতা, সাংবিধানিক যে ধারাবাহিকতা, এটা যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা উনাকে জানিয়েছি, আমরা নির্বাচন কমিশন, আমাদের ওপর সাংবিধানিক যে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে, সেখানে যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, আমরা সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বদ্ধপরিকর। আমরা উনাকে বলেছি, সব রাজনৈতিক দল, সরকার এবং জনগণের সহযোগিতা কামনা করে যাচ্ছি।’ সিইসি বলেন, ‘আমরা উনাকে আশ্বস্ত করেছি, আমরা সবার সহযোগিতায় আসন্ন জাতীয় সংসদ যে নির্বাচনে সাংবিধানিক যে বাধ্যবাধকতা, এর আলোকে যথাসময়ে নিষ্পন্ন করতে সমর্থ হব।’ সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সম্ভাব্য সময়সূচির বিষয়ে আমরা উনাকে জানিয়েছি, যেটা উনিও জানেন, যে কোনো মূল্যে আমাদের যে সময়সীমা, ২৯ জানুয়ারির আগেই (নির্বাচন) করতে হবে। আমরা জানিয়েছি, নির্দিষ্ট তারিখের ব্যাপারে আমরা এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা আজকে উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, মতবিনিময় করে গেলাম, আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সময়সূচি জানিয়ে দেব।’ দ্রুতই তফসিল ঘোষণা করা হবে জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কমিশন বসে দিনতারিখ চূড়ান্ত করলেই গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’ বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না- সিইসির কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সংলাপ নিয়েও কোনো কথা হয়নি। আমরা শুধু আমাদের কথা বলেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে নির্বাচন হয় সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি।’ রাজনৈতিক মতানৈক্য নিয়ে এ সময় কোনো মন্তব্য করতে চাননি সিইসি। চার নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি ইসি সচিবও এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন।