ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, সংক্ষেপে ‘ডাকসু’ হিসাবে পরিচিত। গত ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এই ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সর্বোচ্চ পদবি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরু। সংগঠনের নাম থেকেই অনুমাণ করা যায় এর কাজ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বলা, তাদের অধিকার নিয়ে, সমস্যা নিয়ে, তাদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে কথা বলা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি খাচ্ছেন, হলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা কেমন এবং ক্যাম্পাসে সব ধরণের অপরাধ দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা। যদি সম্ভব হয় তবে দেশের সকল শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে কথা বলা।
কিন্তু ডাকসু নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকেই নুরুল হক নুরু সমালোচিত হয়েছেন নানা কারণে। তবে আলোচনা কিংবা সমালোচনা-তার কোনটির সাথেই সম্পর্ক নেই তার পদবীর। বরং তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন এমন সব কাজে, যাতে ছাত্রদের সুবিধা তো দূরের কথা উপরুন্ত ডাকসু ভবন হয়ে উঠেছে সাধারণ ছাত্রদের কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম। সারাক্ষণই সেখানে ভিপি নুরুকে ঘিরে থাকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। এর বাহিরেও নানা অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছেন নুরুল হক। গত ৩ ডিসেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ডাকসু ভিপি নুরুল হকের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস করা হয়। এই ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে জানতে চাইলে ফাঁস হওয়া ফোনালাপের একটি কণ্ঠ যে তারই তা স্বীকারও করেন ভিপি নুর।
জানা যায়, দায়িত্ব গ্রহণের ১০ মাসেও ভিপি নুরু তার কোন দায়িত্বই পালন করেননি। ঢাবির শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে কোথাও কোনো কথা বলেননি তিনি। ঢাবির শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সাথে কখনোই তিনি কোন বৈঠক করেননি। ঢাবির আবাসিক হলগুলোতে হল সংসদের প্রতিনিধিদের সাথে কখনোই তিনি কথা বলেননি, এমনকি অনেক হল সংসদের প্রতিনিধিরা ভিপি নূরের সাথে নিজেদের সমস্যার বিষয়ে কথা বলতে গেলে নূর তাদের সময় দেননি। সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের কথা বলেন। এরপরই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠে, দায়িত্ব পাওয়ার ১০ মাসের এই সময়ে এ বিষয়ে নুরু কেন কোন কথা বলেননি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভর্তির জন্য আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল কোন শিক্ষার্থীরাই কখনো তাদের ভিপিকে পাশে পাননি। ক্যাম্পাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়ার পরেও তিনি যোগ দেননা কখনোই। এমনকি ডাকসু আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোতে নুরু কখনো অংশ নেননা এমনকি অনুপস্থিতও থাকেন না। নিজে উদ্যোগী হয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ইচ্ছা পোষণ করেননি কখনোই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়োজিত একাধিক গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা নুরুকে ভিপি হিসেবে পুরোপুরি ব্যর্থ মনে করছেন। অনেক ছাত্রদেরই দাবি নুরুকে এই পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া।