নিউজ ডেস্ক:
শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।
যুবসমাজকে মৎস্য উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ব্যাপক একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে গেছে। কাজেই এই সুযোগটাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। যে কোনো ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই যদি মৎস্য খামার করে, মৎস্য খামার থেকে মাছ উৎপাদন করে এবং সেটা যদি বিক্রি করে তাহলে পয়সা পেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। এই দেশকে আমরা সবদিক থেকে উন্নত সমৃদ্ধ করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা এটাই প্রতিজ্ঞা করব, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং নীতি নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সে লক্ষ্য নিয়েই বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মৎস্যজীবী আমাদের এই প্রতিষ্ঠানকে বলব, আপনাদের নিজেদেরও সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করা এবং আমাদের যুবসমাজ যাতে আরও এগিয়ে আসে মৎস্য উৎপাদনে মনোযোগী হয়, সেদিকে একটু দৃষ্টি দিতে হবে। এখানে ব্যাপক একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে গেছে। কাজেই সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সুযোগ সরকারের পক্ষ থেকে করে দিয়েছি বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাস যেন কারও ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থাকতে হবে। অন্যকে সুরক্ষিত করতে হবে। সে জন্য আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ম, নীতি এবং বিধি আপনারা মেনে চলবেন। মৎস্যজীবী লীগের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে গেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করবে। আমরা ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, ১৯৯৮ সালেই দেশকে খাদ্যে স্ব্যয়ংসম্পূর্ণ করে তুলি। দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকারে আসি তখনও আমাদের লক্ষ্য পূরণ করি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টিটা যাতে যোগ হয় তার ব্যবস্থা নেই। সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকেই সচেষ্ট হই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব থেকে নিরাপদ পুষ্টি মাছই দেয়। একটা মানুষ যদি ৬০ গ্রাম মাছ খেতে পারে, সেটা তার জন্য যথেষ্ট। আমরা সেখানে অন্তত ৬২ গ্রাম পর্যন্ত নিতে পারি বা দিতে পারি, সেই সুযোগটাও সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সব থেকে গুরুত্ব দিচ্ছি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার। সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা যায় এবং মৎস্যজাত যে কোনো পণ্য সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করতে পারে, সেই সুযোগটাও সৃষ্টি হচ্ছে।
যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ। বাংলাদেশে শত শত নদী রয়েছে। তাছাড়া খাল-বিল জলাধারগুলো সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে যাতে আরও বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়, তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের মাছের উৎপাদন যেখানে ২৭ লাখ মেট্রিক টন ছিল, এখন আমরা প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি উৎপাদন করা শুরু করেছি। আর ইলিশ উৎপাদনে পৃথিবীতে আমরা কিন্তু এখন এক নম্বর দেশ। আমরা ইলিশ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেই। আর মাছের প্রজননের সময়ে মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দসহ খাদ্য সহায়তা, বিনা পয়সার খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে মাছ উৎপাদনে বিশেষ যত্ন নিচ্ছি। খাদ্য নিরাপত্তার পর পুষ্টি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ায় আস্তে আস্তে মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সায়ীদুর রহমানের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এ ছড়া বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, শাহাবুদ্দীন ফরাজী। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর।