নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১০ টা এক মিনিটে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য মহিমা রয়েছে এ দিনটির। এদিন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কার্যকর করা হয়েছিল প্রথম কারও মৃত্যুদণ্ড।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১০ টা এক মিনিটে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার।
পরবর্তীতে এ পথ ধরেই জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের দায়মুক্তির পথে কিছুটা অগ্রসর হয় দেশ।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই কাদের মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়৷ একই বছরের ১৪ অক্টোবর তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়৷ ২০১২ সালের ২৮ মে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ আর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ওই বছরের ৩ জুলাই থেকে৷
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২৷ রায়ের পরে কারাগারে যাওয়ার পথে হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে ভিক্টরি চিহ্ন দেখায় কাদের মোল্লা। তার এ ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ফুঁসে ওঠে ছাত্র সমাজ। শাহবাগ গোল চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা। দাবি তোলে আইন সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিতের।
শিক্ষার্থীদের সে আন্দোলন গণজাগরণ মঞ্চ আর শাহবাগের যে স্থানে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল তা পরিচিত হয়ে ওঠে প্রজন্ম চত্বর নামে। কয়েকদিনের সে অবরোধে কয়েক লাখ মানুষ সামিল হয়।
তাদের দাবির মুখে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিধান রেখে আইন পাশ হয় জাতীয় সংসদে। এরপর হাইকোর্টের আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে এবং কাদের মোল্লা খালাস চেয়ে আপিল করে৷
২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের রায়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে৷ ৫ ডিসেম্বর প্রকাশ হয় পূর্ণাঙ্গ রায়, আর ৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল-২৷
১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ৷ তবে তার আগেই রাত ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আসামি পক্ষের আবেদনে ফাঁসি কার্যকর স্থগিত করেন৷
পরদিন ১১ ডিসেম্বর তারা রিভিউ আবেদন করেন৷ ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ এই আবেদন খারিজ করে দিলে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার পথে সব বাধা দূর হয়৷ পরবর্তীতে এ পথ ধরেই অন্য শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদেরও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।