নিউজ ডেস্ক : কথায় আছে- কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আর সেই সত্যকে নতুন করে সামনে আনলো পাকিস্তানপন্থী ও তথাকথিত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত মদদপুষ্ট জাতীয় ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ বলে সংবাদ প্রকাশ করে নতুন সমালোচনায় জড়িয়েছে দলটি। দৈনিক সংগ্রামের ওই খবরে বলা হয়েছে- ১২ ডিসেম্বর শহীদ কাদের মোল্লার শাহাদাত বার্ষিকী।
যদিও সর্বজনস্বীকৃত সত্য যে- ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করা ও বাঙালিদের উপর নির্যাতনে কাদের মোল্লার ভূমিকা ছিলো বর্বরোচিত। কিন্তু সেই সত্যকে আড়াল করে তার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধীকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছে জামায়াতের দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক সংগ্রাম’। যে প্রচেষ্টা শুধু ন্যক্কারজনক নয় বরং শহীদদের অবমাননাও।
এদিকে এমন ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীরা বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদ করায় এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘১৩ ডিসেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও মূল্যবান আসবাবপত্র নষ্ট করার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নৈতিকতার জায়গা থেকে হলেও যেখানে এ ঘটনায় জামায়াতের কর্তাব্যক্তিদের ক্ষমা চাওয়া উচিত, সেখানে একজন মানবতাবিরোধী অপরাধীকে শহীদ আখ্যা দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করতে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে সেটি সত্যিই নিন্দনীয় ও অপরাধ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, গণমাধ্যম সত্য ও তথ্য-নির্ভর কথা বলে। গণমাধ্যম একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান। সেখানে মিথ্যার আশ্রয়ে বা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোনো অসত্য ঘটনাকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করার নাম হলো- হলুদ সাংবাদিকতা। যা দৈনিক সংগ্রাম করেছে। এটি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা পরিপন্থী, এমনকি ঘোরতর অন্যায়। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তিকে যদি শহীদ বলে আখ্যা দেয়া হয় তবে সেটি শহীদদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা বৈকি!
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১৩ সালে। স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে তার ফাঁসি কার্যকর করে।