এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কিনতে যাচ্ছে সরকার। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি কেনা হবে। এর জন্য ব্যয় করতে হবে ৬৬ কোটি টাকা। প্রতি কেজি চিনির দর পড়বে প্রায় ৮৩ টাকা। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে। সভাটি আজকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল পদ্ধতি এই সভাটি সভাপত্বি করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘একসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন’ এই চিনি সরবরাহ করবে। তবে প্রতিষ্ঠানটির সাথে দেশীয় এজেন্ট হিসেবে নাম রয়েছে ‘ওএমসি লিমিটেড, ঢাকা’ নামে এক কোম্পানির। মূলত ব্রাজিলের চিনি সরবরাহ করবে তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে চিনির মূল্য ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি চিনির আমদানি ব্যয় হবে ৮২.৮৫ টাকা।
সূত্র জানায়, টিসিবির ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় এক লাখ ৩৮ হাজার টন চিনি ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মোট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি ক্রয়ের প্রস্তাব টিসিবি থেকে গত ৩০ এপ্রিল তারিখে বাণিজ্য মন্ত্রণলয়ে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, সমগ্র বাংলাদেশে (সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ) টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্নআয়ের প্রায় এক কোটি পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির লক্ষ্যে এই চিনির আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা গেছে, টিসিবি কর্তৃক সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি আন্তর্জাতিকভাবে ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুসরণ করে গত ৬ মার্চ তারিখে উন্মুক্ত আহ্বান করা হয়। দরপত্রের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র সংগ্রহ করে। এরপর গত ১৭ মার্চ দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। দরপত্রে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান একসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন (স্থানীয় এজেন্ট: ওএমসি লিমিটেড, ঢাকা) ব্রাজিলের চিনি প্রতি টনের দাম ৪৯৫.৫০ ডলার সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। অন্য দিকে, অপর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ভিত্তিক স্টার মেট্রিক্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টনের দাম ৪৯৫.৮০ ডলার উল্লেখ করে। তবে প্রতি টন চিনি ৫০ কেজির বস্তায় সিএফআর (সি) চট্টগ্রাম প্রাক্কলিত দাফতরিক দর ছিল ৬৩০.৬১ ডলার।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান একসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন এর দরপ্রস্তাব রেসপনসিভ ঘোষণা করে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির ব্রাজিল উৎসের ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি ৫০ কেজি বস্তায় প্রতি টন সিএফআর (সি)/সিপিটি ৪৯৫.৫০ ডলার মূল্যে ক্রয়ের সুপারিশ করা হয়। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি টন চিনি ক্রয় মূল্য দাফতরিক প্রাক্কলিত দর অপেক্ষা (৬৩০.৬১-৪৯৫.৫০)=১৩৫.১১ মা.ডলার কম।
এ অবস্থায়, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং টিসিবির পরিচালনা বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ দরদাতা একসেনচ্যুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশনের ব্রাজিল উৎসের ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি ৫০ কেজির বস্তায় প্রতি টনের ৪৯৫.৫০ ডলার মূল্যে মোট ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ মা.ডলার প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনির মূল্য ৮২.৮৫ টাকা হিসেবে সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি আমদানিতে বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা।