নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকপণ্যের চাহিদা বাড়ছেই। জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে মার্কিনিদের আয় কমেছে। ফলে তারা স্বাভাবিক নিয়মেই কম দামের পোশাকপণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। ভোক্তাদের এই চাহিদা বিবেচনা করেই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশের মতো কম দামি পোশাক উৎপাদক ও সরবরাহকারী দেশগুলোতে ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। এর সঙ্গে মার্কিন ক্রেতাদের চীনবিমুখতা, মিয়ানমারে সামরিক সরকার এবং ভিয়েতনামে চলমান লকডাউন ব্যাপক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন দেশীয় পোশাকশিল্পের মালিকরা। মার্কিন সংগঠন ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (ইউএসএফআইএ) পৃষ্ঠপোষকতায় ও ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারের ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শেং লুর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘২০২১ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন বলছে, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। আগামী দুই বছর এ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকবে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে মূল্যসুবিধা পাওয়া যায় তুলনামূলক বেশি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাকপণ্য আমদানির পরিসংখ্যান সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল বা অটেক্সা আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভিয়েতনামের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর এ ক্ষেত্রে ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে চীনের।
এ প্রসঙ্গে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) উপদেষ্টা ও সংগঠনটির সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এ এইচ আসলাম সানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চীনবিমুখ হওয়ায় বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়ছে। বিশেষ করে কম দামের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তবে তৈরি পোশাকপণ্য উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল সুতার সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জটিলতায় পড়েছেন বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন এই রপ্তানিকারক।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মিয়ানমারে সামরিক সরকার ও ভিয়েতনামে লকডাউন থাকায় মার্কিন ক্রেতারা এখন বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য সুখবর। আশা করছি আগামী দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ অব্যাহতভাবে বাড়বে।’ যুক্তরাষ্ট্রের অটেক্সার প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৩১৩ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানির এই আয়ের প্রবৃদ্ধি দেশটিতে পোশাক রপ্তানিকারক শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত জুলাই পর্যন্ত এক বছরে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ১ হাজার ৩৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। গত বছর জুলাই পর্যন্ত এক বছরে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৮৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ করোনার ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে থাকা মার্কিন বাজারে ভিয়েতনামি পোশাকের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মার্কিন বাজারে ভিয়েতনামের পোশাক আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখানে ২৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
অটেক্সার হিসাব বলছে, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লাগাতার কমছে চীনা পোশাকের কদর। গত বছর জুলাই পর্যন্ত মার্কিন পোশাকের বাজারের ২৭ দশমিক ০৩ শতাংশ দখলে ছিল চীনের। এই দখলদারিত্ব নেমে এসেছে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ মার্কিন বাজার হারিয়েছে চীনা পোশাক। চীনের এই হারিয়ে যাওয়া বাজার দখলে মরিয়া বাংলাদেশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা মোট পোশাকের (ডলারের হিসাবে) ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ সরবরাহ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মেড ইন বাংলাদেশ, গত বছর জুলাই পর্যন্ত যা ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।