নিউজ ডেস্ক:
পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্প ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে বা দুই বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। অথচ প্রকল্পে অগ্রগতি মাত্র ৮ শতাংশ।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। আর প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পটি যখন নেয়া হয়েছিল, তখন এর সম্ভাব্যতা যথাযথভাবে যাচাই না হওয়ায় সময় ও খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবারের সভায় অর্থ ও সময় বৃদ্ধির অনুমোদন দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী একনেক বৈঠকে পায়রা বন্দরের সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘পায়রা বন্দরের সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা আগামী একনেক সভায় আনতে হবে। পায়রা কর্তৃপক্ষ বরাবর এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
প্রকল্প সূত্র জানায়, ‘পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল তিন হাজার ৯৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ৫৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বাড়ানোয় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
এতো অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রকল্পের খরচ ও সময় বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘এ রকম বড় বন্দর করার মতো আমাদের নিজস্ব এক্সপার্ট (বিশেষজ্ঞ) থাকার প্রশ্নই আসে না। শুরুতে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বেলজিয়াম ও ডেনমার্কের দুটি ফার্ম দিয়ে যখন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়, তখন তারা দেখল যে ৪০ হাজার টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ যখন বন্দরে এসে ভিড়বে, তাতে যে ঢেউ সৃষ্টি হবে তা আরসিসি পাইপ সহ্য করতে পারবে না। সে করণে বলা হয়েছে যে, স্টিল পাইপ দিয়ে সেটা করার জন্য। এ কারণে একটা খরচ বেড়েছে।’
‘আরেকটা আন্দারমানিক নদীর ওপরে যে ব্রিজ ছিল, সেটার দৈর্ঘ্য বাড়াতে হয়েছে এ কারণে যে সেটার স্লোপ ৪ শতাংশ করতে বলা হয়েছিল। স্লোপ ৪ শতাংশ করার কারণে দৈর্ঘ্যটা বেড়েছে। এখানে আমাদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে’—যোগ করেন মামুন-আল-রশীদ।
খরচ বৃদ্ধির তৃতীয় কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওখানকার মাটিরও একটা কন্ডিশন আছে। মাটিরও বহন করার ক্ষমতা খুব কম পাওয়া গেছে।’
প্রথমে যখন এত টাকা খরচ করে পায়রাবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল, তখন এগুলো উঠে এলো না কেন– এমন প্রশ্ন একনেক সভায় আলোচিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা আগে করা গেল না কেন- এই প্রশ্ন একনেকেও আলোচিত হয়েছে। এগুলো বাস্তবে কাজ করতে গেলে তখন ধরা পড়ে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় এত বিস্তারিত আসে না।’
এর আগের অগ্রগতি প্রতিবেদনেও বন্দরের কার্যক্রম পিছিয়ে ছিল, এর মধ্যেই মেয়াদ বাড়ানো হলো। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ সম্ভব কি-না, এই প্রশ্নে মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘এই পয়েন্টাও একনেকে আলোচিত হয়েছে। এই দুই বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৭ শতাংশ হয়েছে। বাকি ৯৩ বা ৯৪ শতাংশ কাজ কীভাবে হবে সামনের সময়ে? সেটা করা যাবে। কারণ আমরা ইকুইপ্ট (গোছানো)। আমাদের নকশা হয়ে গেছে, খুব অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এখন শুধু মাঠে নেমে কাজ করা। সুতরাং এটা দুই বছরে করা সম্ভব।’