নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের হরিশপুরে মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া বেগমকে হত্যার অভিযোগ করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। সুমাইয়া নাটোর সদরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার মোস্তাক হোসাইন এর স্ত্রী।
সুমাইয়ার বাবার বাড়ির লোকজন জানান, সোমবার সকালে সুমাইয়ার শশুর জাকির হোসেন ফোন করে সুমাইয়ার মা নুজহাত কে বলেন তার মেয়ে অসুস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এসে দেখে যান। তখন পরিবারের লোকজন সবাই মিলে হাসপাতালে গিয়ে তার অথর মরদেহ দেখতে পায়।
এসময় তার স্বামী মোস্তাক বা শ্বশুরবাড়ির কোন সদস্যকে সেখানে দেখা যায়নি। এ সময় তাদের সন্দেহ হলে তারা ঘটনাটি সদর থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে মরদেহটি সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
পুলিশ জানায় সুমাইয়ার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পরিবারের লোকজন মামলা দায়ের করলেই তদন্ত শেষে বলা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। পুলিশ তদন্তের জন্য সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ি হরিশপুরের বাগানবাড়ি এলাকায় যায় সেখানে গিয়ে পরিবারের কোনো সদস্য কে পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ আরো জানায়, ধারণা করা হচ্ছে তারা পালিয়ে গেছে।
সুমাইয়ার চাচা মোহাম্মদ আলী জানান, ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পরিণয় সূত্রে মোস্তাক হোসাইনের সাথে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। সুমাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স এ ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে ঢাকায় বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতে বাদ সাধে। তারা সুমাইয়ার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চায় এবং বাড়িতে ঘর-গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সুমাইয়া স্বপ্ন সে বিসিএস ক্যাডার হবে। তাই সে থেমে না থেকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।
সুমাইয়ার চাচা আরো জানান, ৬ মাস আগেও সুমাইয়া কে মারধর করে ঘরে বন্ধ করে রেখেছিল তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় সুমাইয়ার সমস্ত লেখাপড়ার খরচ তার বাবা সিদ্দিকুর রহমান যশোরী চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গত বছরে সেপ্টেম্বরে সুমাইয়ার বাবা মারা যান। এরপর থেকে লেখা পড়ার খরচ চালানো নিয়ে নানারকম লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে হতো সুমাইয়াকে।
সুমাইয়ার মা নুজহাত জানান, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মত মেয়ে নয়। জীবনে প্রথম ছাড়া কখনো দ্বিতীয় হয়নি। জেডিসি দাখিল আলিম অনার্স মাস্টার্স সকল পরীক্ষাতেই সুমাইয়া প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সেই মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এলাকাবাসী অনেকেই জানান সুমাইয়া শুধু মেধাবী ছাত্রী নয়। সে খুবই ধীর স্থির শান্ত এবং ভদ্র স্বভাবের মেয়ে। এমন ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে। তারাও দাবি করেছে পুলিশ যাতে সুষ্ঠু তদন্ত করে এবং এর হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকার লোকজন জানান সকাল থেকেই তারা লাপাত্তা। গৃহবধু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
সোমবার সকাল ছয়টার দিকে সদরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সুমাইয়া একই এলাকার মোস্তাক আহমেদের স্ত্রী। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান বড় হরিশপুর ইউনিয়নের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার গৃহবধূ সুমাইয়া খাতুন স্বামীর সাথে কলহের জেরে সোমবার সকালে নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।