নিউজ ডেস্ক:
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি এসেছে। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
করোনা মহামারির মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ৭৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা; মূল্য সংযোজন কর ৯৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা; আয়কর ৮৫ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় হয়েছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। আর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল নেতিবাচক বা ঋণাত্মক।
এনবিআরের মূল্যায়নে দেখা গেছে, গত অর্থবছর উৎসে কর ও করপোরেট কর আহরণ বেশি হয়েছে। এ ছাড়া করোনার সময়ে বিশেষ করে মোবাইল ফোন এবং ওষুধ খাতের ব্যবসাও চাঙা ছিল। এসব কারণে রাজস্ব আদায়ে এ সাফল্য এসেছে।
এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো থেকে উৎসে কর যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি মোবাইল ফোন অপারেটর এবং ওষুধ খাতের ব্যবসা চাঙা থাকার কারণে মূলত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আগের অর্থবছরের তুলনায় করপোরেট কর বেশি আদায় হয়েছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি প্রকল্প বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ পাঁচ মেগা প্রকল্পে গত অর্থবছরে ৩৮ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে।
এসব প্রকল্পের ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের সময় প্রযোজ্য হারে উৎসে কর কেটে রাখা হয়েছে। এ খাতে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি কর আদায় হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার বিপরীতে নানা পর্যায়ে উৎসে কর কেটে রাখা হয়। দেখা গেছে, এভাবে উৎসে কর থেকে সার্বিকভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো এসেছে।
গত অর্থবছরে করহার কমা ও করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দা থাকার পরও রাজস্ব আদায় বেড়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার কারণে এমনিতে ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ গেছে। কিন্তু সরকারের বড় বড় প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বন্দরের কাজ দ্রুত এগিয়েছে। এসব বড় প্রকল্পের ঠিকাদারদের বিপুল অঙ্কের বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। ওই বিলের বিপরীতে যে উৎসে কর কাটা হয়েছে, তা করপোরেট করে যুক্ত হয়েছে।
এ ছাড়া করোনার সময়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার পাশাপাশি ডেটা ব্যবহারও বেড়েছে। ফলে মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে বেশি কর আদায় হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধ খাতের কোম্পানির ব্যবসা ভালো হয়েছে।
আমিনুল করিম আরও বলেন, করপোরেট করের আরেকটি বড় উৎস ব্যাংক খাত। মন্দার মধ্যেও গত বছর ব্যাংক খাত মোটামুটি ভালো ব্যবসা করেছে। ফলে এ খাত থেকে আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, করপোরেট করহার কমানোর ফলেও গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৫২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার করপোরেট কর আদায় হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের নিবন্ধিত প্রায় ৩০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করপোরেট কর দিয়েছে।
এটি মোট আয়করের প্রায় ৬২ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৩ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার করপোরেট কর আদায় হয়েছিল।
গত অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো হয়। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার দাঁড়ায় ২৫ শতাংশ। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে তা সাড়ে ৩২ শতাংশ।
এ ছাড়া ব্যাংক, সিগারেট কিংবা মোবাইল ফোন কোম্পানির করপোরেট সাড়ে ৩৭ থেকে ৪৫ শতাংশ।
করহার কমানো হলেও আদায়ে প্রভাব ফেলেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরে বেশি করপোরেট কর আদায় হয়েছে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট থেকে।
গত বছরে আদায়কৃত করের প্রায় অর্ধেকই হয়েছে এই ইউনিট থেকে। বৃহৎ করদাতা ইউনিটে ২৮১টি কোম্পানি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, শাহ সিমেন্ট, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, সেভেন রিং সিমেন্ট, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো; ডাচ্-বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক এবং ওষুধ খাতের স্কয়ার, বেক্সিমকো ও ইনসেপ্টা ইত্যাদি। বৃহৎ করদাতা ইউনিট থেকে মোট ২৪ হাজার ১১ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে।