- অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ মন্ত্রীর
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখন থেকে প্রকল্প গ্রহণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। একই সঙ্গে মন্ত্রী বলেছেন, দশের চলমান সব মেগাপ্রকল্প মানুষের মনে স্বপ্ন জাগিয়েছে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিশেষ অবদান রাখবে বলেও জানান মন্ত্রী।
মঙ্গলবার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) দলিল অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখন থেকে প্রকল্প গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যেহেতু এই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত হয়েছে, সেহেতু আগামী পাঁচবছরের মধ্যে পরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। এম এ মান্নান বলেন, এই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় অনেকগুলো ছোট ছোট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২১-২০২৫) অনেক ‘ডেভেলপমেন্ট বেবি’র জন্ম হবে। প্রকল্পগুলোকে ‘উন্নয়ন শিশু’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনার আওতায় অনেকগুলো বেবি জন্ম হবে। যেগুলোকে আমরা প্রজেক্ট বলে থাকি। অনেকগুলো নতুন বেবি জন্ম নেবে। পরিকল্পনা বেবিজ হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট বেবিজ। পরিকল্পনার মাধ্যমে যেসব বেবির জন্ম হবে সেগুলো পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা পৃথিবীতে নিয়ে আসবেন। এই পরিকল্পনা মানুষের মঙ্গলের জন্য, বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিশেষ অবদান রাখবে। যা মানুষের জীবনে প্রতিফলিত হবে মঙ্গলের দিকে, বিকাশের দিকে, বিনাশের দিকে নয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের চলমান মেগাপ্রকল্পগুলো কবে শেষ হবে, কবে আরেকটি স্প্যান বসবে এবং উন্নয়নের সর্বশেষ পরিস্থিতি কী- এসব জানতে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়িতই বড় বড় প্রকল্পগুলোর পরিস্থিতি জানতে চায়। আমি মনে করি, আমরা সবাই সৎ। অসৎ না হওয়া পর্যন্ত। আমরা আমাদের সততা দিয়ে সকল কাজ বাস্তবায়ন করে যাব। মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করব, আমাদের আস্থা আছে যে, তারা (কর্মকর্তা) তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা গভীর চিন্তা করেই প্রকল্প হাতে নিয়ে থাকি। এই কাজটা আমাদের করতেই হবে। প্রকল্পগুলো প্রকাশ করবে আগামী পাঁচ বছরে। এগুলো মানুষের জীবনে উন্নয়ন বয়ে আনবে। আমাদের আস্থা আছে, মানুষের কল্যাণেই সকল কাজ করব। আমরা সবাই অসৎ না হয় সৎ হব। পদ্মাসেতু প্রসঙ্গে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতু যারা অনুধাবন করবেন না তারা পিছিয়ে পড়বেন। পদ্মাসেতু এখন তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের প্রকল্প। আমি নিজেও দেখেছি তরুণরা নিজে গাড়ি ভাড়া করে পদ্মাসেতু দেখতে যায়। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ অর্থবছরে ১১ হাজার ৩৬২ বিলিয়ন টাকা। তা বৃদ্ধি করে ২০২৫ অর্থবছরে ২১ হাজার ১৯ বিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। লিখিত বক্তব্যে শামসুল আলম বলেন, বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং তা বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। পুঁজিবাজারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হিসাব ও নিরীক্ষা পদ্ধতি হালনাগাদ করে বাজারে আস্থা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত কৌশল অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের টার্নওভার গত এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার মুদ্রাবাজারে সুদ হার হ্রাস, মানসম্পন্ন স্টকের তালিকাভুক্তিকরণ এবং সক্রিয় নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই পরিকল্পনা মেয়াদে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর আত্ম-কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশাবাদী। ড. শামসুল আলম বলেন, এটাকে এখন আর সংশোধনের সুযোগ নেই। এটি কিন্তু এখন স্বীকৃত দলিল। এটি বাস্তবায়নে এখন এগিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারী, আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশিদ, মোছাঃ নাসিমা বেগম প্রমুখ।