আবু তালহা
‘ভালো লাগছে না’ পরিস্থিতিতে সুযোগ পেলে সিনেমা দেখি। অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত শঙ্কর মুদি দেখার পরের অনুভূতি প্রকাশ করা বেশ কঠিন। আবার অনুভূতির গভীরতা এতটা বেশি যে লিখতে ইচ্ছা করে।
মাত্র পৌনে দুই ঘণ্টায় আমার ফেলে আসা জীবনের সবটা দেখিয়ে দিয়েছে এই সিনেমায়।
যারা অভিনয় করেছেন সবাই প্রিয় মুখ। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার, শ্বাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, কাঞ্চন মল্লিক, অঞ্জন দত্ত, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত।
প্রেক্ষাপট: ভারত। এক বদলে যাওয়া সময়। ছোট্ট মফস্বল শহরকে আমিও একইভাবে বদলে যেতে দেখেছি। একটি দোকান ঘিরে আড্ডা ভেঙে যেতে দেখেছি। মানুষকে এক হয়ে যেতে দেখেছি।
কবীর সুমনের গান দিয়ে শুরু– রঙের বাহার কম সাদামাটা বেশি/ তাও তো সকাল দেয় জীবনের মানে/ এখানে মানুষ, মানুষের প্রতিবেশী/ দেখা হবে কালো দ্বার চায়ের দোকানে।।
গানটায় সেই সময়ের কথা বলা হচ্ছে, যখন কারো বাড়ি বা বাসায় যাওয়ার আগে কল করতে হতো না। বিপদে-আপদে লোকজন আপনি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তো। লোকে জানতো, কার ঘরে চুলা জ্বলেনি। কেউ মারা গেলে তিন গ্রামের মানুষ কাঁদতো।
গল্পটা সেই সময় বদলে যাওয়ার। অধিকাংশ গান সুমনের গাওয়া। আর সুমনের গানই একেকটা গল্প। গানের কথাগুলো লিখছি, তাতেই গল্প বোঝা যাবে।
ফরেনের টাকা এলে, বাজারে ও হাটে/ দিশি কারবারগুলো উঠে যাবে, লাটে উঠে যাবে লাটে।।
সবচেয়ে বেশি আপসোস শোনা যায় মাস্টার মশাইয়ের মুখে। নানা অসঙ্গতির সমালোচনা করেন সারাক্ষণ। অন্যের বিপদে অবশ্য জানালা বন্ধ করে দেন। শঙ্করের দোকান থেকে হিং কেনার সময় বলছেন, এক সময় হিং কেবল কাবুলিওয়ালারাই বিক্রি করতো। হিং হলো যৌন উত্তেজনা বর্ধক। যে দেশে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট অন্তর একটা করে রেইপ হয়, সে দেশে রান্নায় কেন হিং দেয় বলতো?
এখানে মানুষ, মানুষের প্রতিবেশী;
সীতা, শঙ্করের দোকান থেকে ইঁদুর মারার বিষ কিনে নিয়ে যায়। ধারণা করা গেল, আত্মহত্যা তার উদ্দেশ্য। আরও কয়েকজন তো বটেই, শঙ্কর তার দোকান ফেলে ছুটলেন সীতার বাড়ির দিকে।
বিশ্বাস দা মারা গেলেন–
চলে গেলে নাম কাটা যায়, মুদির খাতায়/ দেনার বালাই নেই, ফেলে যাওয়া ঘরে/ চিতার আগুনে ধার-দেনা ঘর করে/ বহুরূপী জানে, ঘর কোথায় কেমন/ পড়শীর দেনা মুদি খাতায় যেমন।।
বদলে যাওয়ার শুরুতে–
কিছু কিছু পেটে লাথি পড়বেই, লাথিটাই সম্ভব/ উন্নয়নের লাথিটাও ভালো এই হলো রাজনীতি/ শুনে নাও তবে লাথিটাই হবে আমাদের সম্প্রতি।।
প্রসঙ্গক্রমে আসে জন হেনরির হাতুড়ি। যন্ত্রে মানুষে লড়াই চললো, হেনরির হলো জয়/ এত মেহনত শরীরে সয় না, জিতেও মরতে হয়।।
আজকের জন হেনরি যেন/ হাতুড়ি বনাম যন্ত্রদানব/ না লড়লে আর জীবন কেন।।
বড় বড় মল গড়ে ওঠে। অন্নপুর্না ভাণ্ডারে আর কেউ যায় না। শঙ্কর মারা যান…
লেখকঃ সিনিয়র বার্তাকক্ষ সম্পাদক, সারাবাংলা ডটনেট এবং দৈনিক সারাবাংলা
(লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)