রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / মুজিববর্ষে অনন্য মাইলফলকে দেশ

মুজিববর্ষে অনন্য মাইলফলকে দেশ

নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। এর মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষে অনন্য মাইলফলকে প্রবেশ করল দেশ।

গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এলডিসি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ায় এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হন। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এতে অংশগ্রহণ করেন।

করোনার কারণে দীর্ঘ এক বছর পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আলজাজিরায় প্রচারিত প্রতিবেদন, করোনায় জীবন-জীবিকা চালু রাখা নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সরকারপ্রধান। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন সম্প্রচার করে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সিনিয়র এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আইন নিজ গতিতে চলছে, চলবে। কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। কিন্তু কারও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ তৈরি করাও কাম্য নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন গড়েছি তখন ডিজিটাল বিশ্বে নিরাপত্তা দেওয়াও সরকারের কাজ। আলজাজিরা চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, আমার এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়াও নাই, আমার কিছু বলারও নাই। কারণ, একটা চ্যানেল কী বলছে না বলছে সেটা দেশবাসীই বিচার করে দেখবে। দেশের মানুষই বিচার করে দেখবে এটা কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা, কতটুকু বানোয়াট। আর কী উদ্দেশ্যে তারা করছে সেটাও বড় কথা। আমি মানুষের রাজনীতি জন্য করি।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর পর আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তবু সরাসরি নয়, ভার্চুয়ালি। আজ অবশ্য আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি বাংলাদেশের একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের এ অর্জন তুলে ধরে তিনি বলেন, এ কৃতিত্ব এ দেশের আপামর জনসাধারণের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এ মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ তুলে দেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে স্বীকৃতিটা পেলাম, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় অর্জন। আর এ খবরটা আমি কার কাছ থেকে সর্বপ্রথম পাই, শেখ রেহানার কাছ থেকে। তার কাছে অনবরত ওখান থেকে খবর আসতে থাকে এবং সেই প্রথম আমাকে সাড়ে ৯টার সময় জানায়।

লক্ষ্য অর্জনের এই সময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এ উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটল যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছি; আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ মানদন্ডের চেয়ে প্রায় এক দশমিক সাত গুণ বেশি। মানবসম্পদ সূচকে নির্ধারিত মানদন্ড ৬৬-এর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ৭৫ দশমিক ৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা সূচকে উত্তরণের জন্য মানদন্ড নির্ধারিত ছিল ৩২ বা তার কম। কিন্তু ওই সময়ে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৭। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকাল ভোগ করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল মাত্র ৫ হাজার ২৭১ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের গড় আয়ু ২০০৯-১০ বছরের ৬৯ দশমিক ৬১ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৬ বছর। ২০০৯-১০ বছরের তুলনায় পাঁচ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ২৮। মাতৃমৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে লাখে ১৬৫ জনে, যা ২০০৯-১০-এ ছিল ২৮০ জন। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আজ শহর থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সব ঘরহীনকে ঘর প্রদান কর্মসূচির আওতায় ৮ লাখ ৯২ হাজার ঘরহীনকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার ঘর নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে চলতি বাজেটে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৮-৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য-১ শতাংশ। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা আজ স্বাবলম্বী। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৫৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সপ্তম। করোনাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এখন পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করতে হবে। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে এলডিসি থেকে উত্তরণ আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ। উন্নত দেশে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। টেকসই উত্তরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশল এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু এ বছর বা আগামী বছরের শুরুতে চালু হবে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক ও আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান তৈরিসহ আমাদের অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচিত- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বটা আমাদের পালন করতে হবে, কারণ এ ডিজিটাল পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে কেউ যেন বিপথে যেতে না পারে। কোনোরকম অসামাজিক কার্যকলাপ বা জঙ্গিবাদ বা অন্য কোনো ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত হতে না পারে সে জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া একান্তভাবে কর্তব্য। যাতে এমন কোনো কাজ করতে না পারে যা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও মৃত্যু কাম্য নয়, কিন্তু সেটাকে কেন্দ্র করে অশান্তি সৃষ্টি করাও কাম্য নয়। কেউ অসুস্থ হয়ে মারা গেলে কী করার আছে!

সমালোচকদের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সমালোচনা যারা করছেন, তারা করবেনই। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা কারা করছে? তারা কি বাস্তব কথা একবারও উপলব্ধি করতে পারে? আজ শুভ দিন। আজ অন্য কোনো কথা বলতে চাই না। আমার বয়স ৭৫ বছর। মানুষের অধিকার আদায় করতে স্কুলে থাকতেই রাস্তায় নামতে শুরু করেছি। সেই বাষট্টি সাল থেকে পথে পথে আছি মানুষের জন্য। কাজেই দেশের সবাইকে চেনা আছে। কে কোথায় কী করছে, সেটা আমাদের জানা আছে। তিনি আরও বলেন, কারাগারে বন্দী অবস্থায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। তেমন কিছু তো ঘটেনি! কেউ অসুস্থ হয়ে মারা গেলে কী করার আছে? তবে কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। আবার কারও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ তৈরি করাও কাম্য নয়।

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরায় সম্প্রতি বাংলাদেশকে নিয়ে প্রচারিত তথ্যচিত্র প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। কিছু বলারও নেই। একটি চ্যানেল কী করছে না করছে, দেশবাসী বিচার করে দেখবে। দেশের মানুষ বিচার করে দেখবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, খুনিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভালো চাকরি দেওয়া হয়েছে, সংসদে বসানো হয়েছে, মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। যারা এগুলো করেছে, তাদের সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কী? গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেই প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি সন্তান হিসেবে যখন সরকারে এসেছি, মা-বাবার হত্যার বিচার পেয়েছি। ইনডেমনিটি বাতিল করে জাতির জনকের খুনিদের বিচার করা হয়েছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, লুটপাট চালিয়েছে। জাতির পিতা তাদের বিচার শুরু করেছিলেন। তাদের মুক্ত করে মন্ত্রী-উপদেষ্টা করা হয়েছে, সরকারে জায়গা দেওয়া হয়েছে। সেইসব মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত যারা, তাদের আমরা বিচার করেছি। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের বিচার হয়েছে। এই যে যাদের বিচার হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত এসব আসামির দোসর যারা, তারা বসে থাকবে নাকি? তাদেরও তো কিছু ইন্ধন আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের অদ্ভুত একটা মিথস্ক্রিয়া আছে। সময়ে সময়ে আল্ট্রা লেফট, আল্ট্রা রাইট এরা সব এক হয়ে যায়। আমাদের অপরাধ কী, সেটাই প্রশ্ন।

২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। এরপর সবকিছু সামাল দিয়ে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কি সহজ কাজ? তারপরও করেছি। আজ এই যে স্বীকৃতি পেয়েছি, সেটি ধরে রাখতে হবে। এই অর্জন স্থায়ী করতে হবে, টেকসই করতে হবে। তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে, পরিকল্পনাও আছে। সেগুলো ঠিকঠাক করেই কাজ করব।

সরকারের সমালোচকদের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, আমাদের হত্যার চেষ্টা করেছে, দেশকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে শুধু নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত ছিল, তারা দেশের উন্নতি মানবে কীভাবে? তারা তো দেশের উন্নতি মানতে পারে না। তাদের চেষ্টা থাকে কীভাবে বাংলাদেশের বদনাম করা যায়। তিনি বলেন, তবে আমার চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। সবকিছু মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে। কোন চ্যানেল কী বলল না বলল সেটা শুনে রাজনীতি করা আমার কাজ না। যার যা বলার, বলতে থাকুক। বলাটাই তাদের কাজ। আর জনগণের কাজ করাটাই আমার কাজ।

পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরবর্তী নির্বাচন তো ২০২৪ সালে। তখন সিদ্ধান্ত নেব কী করব। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করবে। এই অর্জনকে ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি, আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২০২৪ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রয়োজনীয় সূচকগুলো ধরে রাখতে হবে। আর সেই চ্যালেঞ্জ নিতে যা যা করা দরকার, আমি করতে প্রস্তুত। আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশে এমন মানুষ ছিল, যাদের কোনো আশা-ভরসা নেই, হাত পেতে চলতে হয়। তাদের জন্য আমরা ঠিকানার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মুজিববর্ষে এটিই সবচেয়ে বড় কাজ। ওই ঠিকানাই তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করবে।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমরা মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি। ওই সময় আমার ১৯৭১ সালের কথা মনে হয়েছে, যখন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহু বাংলাদেশিকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল ভারতে। ওই সময় আমার ছোট বোন রেহানাও বলেছিল, তুমি ১৬ কোটি মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা করো, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়াতে পারবে না? তাই আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রত্যাবাসনে কাজ চলছে।

করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি অবশ্যই টিকা নেব। তবে আমার দেশের কত পার্সেন্ট মানুষ আগে নিতে পারল, কত জনকে দিতে পারলাম সেটা দেখতে চাই। যদি আমার একটা টিকার জন্য আরেকটা মানুষের জীবন বাঁচে সেটাই তো সবচেয়ে বড় কথা, তাই না! আমার ৭৫ বছর বয়স। আজ আছি, কাল নেই। হায়াত-মউত কে বলতে পারে! যে কোনো সময় মারা যেতে পারি। আমি খোঁজ নিচ্ছি, আমাদের একটা টার্গেট করা আছে। সে পরিমাণ যখন দেওয়া হবে, তখন টিকা যদি বাঁচে, তখন আমারটা আমি নেব।’

মুখোমুখি সংবাদ সম্মেলন হলে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ পেতেন বলে এক সাংবাদিক আক্ষেপ করার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ডিজিটাল হওয়ায় তাও তো দেখা হলো। না হলে তো এটাও হতো না। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ছোট জেলে বন্দী ছিলাম, এখন বড় জেলে। আমার তো বন্দী জীবন। কোথাও যেতে পারছি না। তবে এই ডিজিটাল হওয়ায় আজ বাংলাদেশ একটা ধাপে উঠে আসতে পেরেছে। সবাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে বলে আজ আমাদের এ অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রাইমারি থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সকল স্কুল-কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী এবং যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বা হোস্টেলে থাকবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী যে বয়সীদের টিকা দেওয়া যায়, তাদের সবাইকে টিকার আওতার আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা দেব, কারণ আমরা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত খুলতে চাই। পড়াশোনার পরিবেশটা ফিরিয়ে আনতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া- এটা তো আমার কর্তব্য, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু না, আমি জাতির পিতার কন্যা, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেই হিসেবে আমি মনে করি, আমার এটা কর্তব্য, আমরা করে যাচ্ছি।

আরও দেখুন

তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতি আশার সঞ্চার করছে:দুলু

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন,গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে তারেক …