নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আজ রবিবার জাতীয় সংসদের ‘বিশেষ অধিবেশন’ বসছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় চলতি একাদশ সংসদের এই দশম অধিবেশন শুরু হবে। এটি বিশেষ অধিবেশন হলেও প্রথম কার্যদিবস চলবে সাধারণ অধিবেশনের মতো। পরদিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্মারক বক্তৃতার মাধ্যমে শুরু হবে বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণ সংসদ কক্ষে দেখানো হবে। কোভিড-১৯ মহামারীকালের আগের তিনটি অধিবেশনের মতো এবারও সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ অধিবেশনের কার্যক্রম চলবে।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথমদিনের কর্মসূচিতে প্রথমে সভাপতিম-লীর মনোনয়ন, শোকপ্রস্তাব গ্রহণ, প্রশ্নোত্তর ও ৭১ বিধির জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন মনোযোগ আকর্ষণের নোটিশ নিষ্পত্তি হবে। এর পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২০ উপস্থাপন হবে। এ ছাড়া এদিন তথ্য কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপন ও দুটি বিল উত্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-২০২০ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০ উত্থাপন হবে। ৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। ওইদিন অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন।
বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতার পর তা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সাধারণ প্রস্তাব আনা হবে। ওই প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের আলোচনা শেষে তা পাস হবে।
সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ প্রস্তাবের ওপর টানা চারদিন আলোচনা হতে পারে। পরে বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে। এর পর আগামী সপ্তাহে দুই বা তিনদিন সাধারণ বৈঠক চলার মাধ্যমে অধিবেশনটি শেষ হবে। বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছে সংসদ সচিবালয়। কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য শুক্রবার সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাংবাদিকদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিন কোভিড-১৯ নেগেটিভ সব সংসদ সদস্যই বৈঠকে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এর পর সংসদ সদস্যরা তালিকা অনুযায়ী বৈঠকে যোগ দেবেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনে এ বছরকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে নানা কর্মসূচি নিয়েছিল সরকার। তার অংশ হিসেবে গত ৯ জানুয়ারি সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই বিশেষ অধিবেশন করার সিদ্ধান্ত হয়। কথা ছিল, ২২-২৩ মার্চ এই বিশেষ অধিবেশন হবে। অধিবেশনের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। এর পর বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হবে। কিন্তু বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়, সংসদের বিশেষ অধিবেশনও স্থগিত হয়ে যায়। এর আগে ১৯৭৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১৮ জুন সংসদে যে বিশেষ বৈঠক বসেছিল, সেখানে যুগোসøাভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি বরাহগিরি ভেঙ্কটগিরি ভাষণ দিয়েছিলেন। এবার মার্চে যে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল, সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্পিকারদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা ছিল; কিন্তু তখন তা স্থগিত হয়।
এদিকে ৯ নভেম্বর বিশেষ অধিবেশনে সংসদ কক্ষে দেশীয় বিভিন্ন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাতে না পারছেন বলে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিভিন্ন জনের কাছে পাঠানো কার্ডে স্পিকার বলেছেন, ‘বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিজনিত কারণে বিশেষ অধিবেশন সশরীরে প্রত্যক্ষ করার জন্য সংসদ ভবনে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে অপারগ হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’