প্রায় ৫ বছর পর অপেক্ষার পর চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী,রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ২১টি জেলার ৩৯২ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ অনুযায়ী স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে তাদেরকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই তাদের নামে গেজেট প্রকাশ করা হবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে ইতিমধ্যে মারা গেছেন। মন্ত্রণালয় বলছে, গেজেটভুক্ত হওয়ার পর তারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। তবে গেজেটভুক্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের অবর্তমানে পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধার ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন।
২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ও সরাসরি আবেদন করেছিলেন প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম দফায় তাদের মধ্যে থেকে সাড়ে তেরশ ব্যক্তিকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ৩৯২ জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জামুকার ৮২তম সভায় তাদের স্বীকৃতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি জামুকার এ সংক্রান্ত কার্যপত্র চূড়ান্ত অনুমোদন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক।
জামুকা সভার কার্যপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। তারমধ্যে থেকে উপজেলা পর্যায়ে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর ১১১টি উপজেলার ২২৩৫ জনকে ‘খ’ ও ‘গ’ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। পরে বিভাগীয় কমিটির সুপারিশপ্রাপ্তদের নথি পর্যালোচনা করে জামুকার ৮২তম সভায় ৩৯২ জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই তালিকার ১৭৯২ জনের সুপারিশ না’মঞ্জুর এবং ২ জনের নাম উপ-কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে জামুকা।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা প্রায় ৪০০ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের নামে শিগগিরই গেজেট প্রকাশ করা হবে। গেজেট প্রকাশের পর ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায়ও তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বিভাগওয়ারী স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের মধ্যে ঢাকা ১২৫, ময়মনসিংহর ৩৩, চট্টগ্রাম ১৬৪, রাজশাহী ৩৮, রংপুর ৩, ও বরিশালের ২৯ জন। জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪টি এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০টি আবেদন জমা নেওয়া হয়। পাশাপাশি আবেদনে উপজেলা বা জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি, এমন আবেদনও পাওয়া যায় ৫ হাজার ৫৫৩টি। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, এর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তাদের সবাইকে যাছাই-বাছাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের ৪৭০টি উপজেলা, জেলা, মহানগরে কমিটি গঠন করে আবেদনকারী ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়। সেই যাচাই-বাছাইয়ের ধারাবাহিকতায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।