মুসা আকন্দ:
১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৭ নং সেক্টরে তিনি সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার অধীনে বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি যুদ্ধের পরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি তার নামে ইস্যুকৃত থ্রি নট থ্রি রাইফেলটি সিরাজগঞ্জ এসডিও অফিসে জমা দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন। যুদ্ধপরবর্তী জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কর্মব্যস্ত থাকায় ইতিপূর্বে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি সামাদ। দেশের বিভিন্ন স্থানে সুনামের সাথে চাকরি করে ২০০৯ সালে সহকারী পুলিশ সুপার পদে থাকাকালীন অবসর গ্রহণ করেন আব্দুস সামাদ।
বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করেন। তার সকল প্রমাণিত দলিল থাকা সত্বেও অনেক চেষ্টা করেও তিনি তার নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাতে পারেননি। নাটোর জেলার খসড়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত আছে, যার ক্রমিক নং ৪৮। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট তালিকা অন্তর্ভুক্ত হয়নি আজও।
এ নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন। কিন্তু কোনবারই তার নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন। ২০০৮ সালে ঢাকার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তি করার জন্য একটি পত্র প্রেরণ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সকল প্রমাণাদি সংরক্ষণ করে এবং সেইগুলো আবেদনের সাথে জমা দিয়েও এখনো পর্যন্ত নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি কোন একে অজানা কারণে।
জীবন সায়াহ্নে এসে তার একটাই চাওয়া তিনি শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে চান। ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। ১৯৮৩ সালে যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে তার নিজ জেলা সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার ঘুশুরিয়া গ্রাম থেকে চলে আসেন বর্তমান ঠিকানা নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায়।
সাত সন্তানের জনক এই মুক্তিযোদ্ধার ২ ছেলে এবং ৫ মেয়ে। ৫ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। বড় ছেলে শিক্ষা জীবন শেষ করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে বড়াইগ্রামের রাজাপুর ডিগ্রি কলেজে অনার্স শেষবর্ষের ছাত্র। শেষ জীবনে এসে তিনি তার নাম মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করাতে চান। এরই প্রচেষ্টা স্বরূপ তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে গিয়েছেন তার স্বপক্ষের সমস্ত প্রমাণিত দলিলসহ।
এ ব্যাপারে দিনাজপুরের জনৈক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবু দাউদ তার কাছ থেকে গেজেট অন্তর্ভূক্তির খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকাও নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নেয়ার পর তিনি তার মোবাইল ফোন (০১৭৮৯৫৮২৪৫১)বন্ধ করে দেন এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তিনি জানেন না আর কার কাছে গেলে তিনি তার নাম গেজেটে অন্তর্ভূক্ত করতে পারবেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত এক চোখে দেখতেই পাননা অন্যচোখে ঝাপসা দেখেন, কানেও তেমন শুনতে পাননা এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
তাঁর মেঝ মেয়ে রুবিনা একজন গৃহিনী। তিনি বেশিরভাগ সময়ে বাবার দেখা শোনা এবং খোঁজ খবর নেন। তিনি জানান, বাবা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। এজন্যে তার মনে খুবই কষ্ট। রুবিনা জানান, তাদের আকাঙ্খা তাদের বাবা আব্দুস সামাদ যেন স্বীকৃতি পান এবং তিনি ও তার পরবর্তী প্রজন্ম যেন গর্বভরে বলতে পারেন যে আমরা মুক্তিযোদ্ধার বংশধর।
এ বিষয়ে এই প্রতিবেদককে আব্দুস সামাদ জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী মমতাময়ী শেখ হাসিনাই শুধু পারেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে। আমি তার কাছেই আকুল আবেদন জানাচ্ছি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে। তাহলে হয়তো মরে গিয়েও সুখ পাবো।
লেখক: সংবাদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী