নিউজ ডেস্ক:
মিরসরাই-সীতাকুন্ড ও ফেনীর সোনাগাজী এলাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে একের পর এক বিশ্বমানের কারখানা গড়ে উঠছে। ২০১৮ সাল থেকে এখানকার একশ’ একর জমিতে গড়ে উঠছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি বৈদু্যতিক গাড়ি নির্মাণ কারখানা। শুধু গাড়ি নয় তারা এখানে তৈরি করবে ব্যাটারি ও চার্জিং ইউনিট। বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের এ গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এখানে ৭০ ভাগ যন্ত্রাংশ তৈরি করবে, বাকি ৩০ ভাগ সংযোজিত হবে।
বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে বিশ্বের বেশকিছু গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কারখানা তৈরির জন্য জমি নিয়েছে। এরই মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তারা ২০১৮ সালে তাদের কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু করে। মাঝে করোনা মহামারির কারণে কাজ কিছুটা স্থবির হরেও বর্তমানে খুব দ্রম্নত চলছে কারখানা নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। আমরা আশা করছি ২০২২ সালের মধ্যে দেশি ব্র্যান্ডের এ গাড়ি কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে যাবে। চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিকে অংশীদার করে তারা মধ্যম থেকে উচ্চ আয়ের মানুষের জন্য ইলেকট্রনিক এসব গাড়ি উৎপাদন করবে।
সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের জিরো পয়েন্ট এলাকার উত্তরাঞ্চলে নির্মাণাধীন এ গাড়ি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে কারখানার স্টিল অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই এটি দৃশ্যমান হবে।
এদিকে জানা গেছে, দেশের স্বল্প আয়ের লোকজন বিশেষ করে শিক্ষক, মধ্যম সারির প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কথা মাথায় রেখে কোম্পানিটি তাদের গাড়ি উৎপাদন করতে চায়। তারা শুধু চার চাকার বৈদু্যতিক গাড়িই নয়, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, মোটরবাইক উৎপাদনের পরিকল্পনা আছে তাদের। এসব গাড়ির তাৎক্ষণিক চার্জ সুবিধা দিতে দেশের প্রত্যেকটি সিএনজি, এলপিজি ও পেট্রোল পাম্পে থাকবে চার্জিং সিস্টেম। এছাড়া এসব গাড়ির ব্যাটারি বাসায়ও চার্জ দেয়া যাবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
দেশে প্রথমবারের মতো বৈদু্যতিক গাড়ি তৈরি করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান এ মান্নান খান সাংবাদিকদের জানান, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করে তিনি জানতে পারেন বিশ্বের বড় বড় সব গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বৈদু্যতিক গাড়ি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। এর জন্য তিনিও বাংলাদেশে স্বদেশি ব্র্যান্ডের এসব গাড়ি উৎপাদনের পরিকল্পণা করেন।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জানান, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের কারখানায় মোট বিনিয়োগ হবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ দুই ধাপে বিনিয়োগ করা হবে।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আব্দুস সামাদ যায়যায়দিনকে বলেন, কারখানা নির্মাণের জন্য জমি পেতে ২০১৭ সালে বেজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে তারা মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। পরে বন্দর সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে মিরসরাইয়ে একশ’ একর জমি বরাদ্দ দেয় তারা। এরপর আমরা ২০১৮ সালে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করি। তিনি আরও জানান, আমাদের অটো ইন্ডাস্ট্রিজে গাড়ি উৎপাদন করা হবে। গাড়ির ৭০ শতাংশই কারখানায় উৎপাদন করা হবে। বাকি ৩০ ভাগ সংযোজন করা হবে।’
জানা গেছে, এখানকার কারখানায় উৎপাদিত ৫ সিটের সেডান গাড়ির দাম পড়বে ১৩ লাখ টাকা। থাকবে কিস্তির সুবিধাও। গাড়িগুলো হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের। নকশা তৈরি করা হয়েছে দেশে ব্যবহারের পর্যাপ্ত সুবিধা রেখে। নকশা তৈরির ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের বিষয়টিও মাথায় রেখেছে কোম্পানিটি।
আরও জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে কোম্পানিটি একশ’ একর জমির মধ্যে আলাদা দুটি কোম্পানি গঠন করবে। একটির নাম বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড। যার অংশীদার হংকংয়ের জিয়াংসু রুইহং লিথিয়াম কোম্পানি লিমিটেড। আরেকটি হচ্ছে মোটর টেকনোলজি লিমিটেড। এটির অংশীদার চীনের উহান সায়ান পাওয়ার টেকনোলজি কোম্পানি।