রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের আধুনিকায়নে বেড়েছে সেবার মান। রোগীরাও প্রকাশ করছেন সন্তুষ্টি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মিটফোর্ড হাসপাতালের ইমারজেন্সি, ক্যাজুয়ালটি বিভাগ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা রুম ও যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, আইসিইউ, এনআইসিইউ, এইচআইডি ও বহির্বিভাগ, টিকিট কাউন্টারসহ পুরো হাসপাতালেই এসেছে পরিবর্তন। চালু করা হয়েছে এইচডিইউ। স্থাপন করা হয়েছে নতুন ক্যাথ ল্যাব, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিন। ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে যুক্ত হয়েছে আরো ১০টি হেমোডায়ালাইসিস মেশিন। কার্ডিয়াক সার্জারির অপারেশন থিয়েটার ও ইউনিটির কাজ চলছে। এ বিভাগ চালু হলে উপকৃত হবে গরিব রোগীরা। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটারসহ চিকিৎসকদের কক্ষ আরো উন্নত করা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের ওষুধপথ্য এবং রোগীদের বিছানাপত্রসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রাখতে করা হয়েছে তিনটি গোডাউন।
ইমার্জেন্সি বিভাগে ঢুকতেই দেখা গেল দেয়ালে সাঁটানো নানা তথ্য। টিকিট ফি-সহ কোন পরীক্ষায় কত টাকা ফি। এ ছাড়া কোন ভবনে কী চিকিৎসা হচ্ছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক দুইজন কর্মচারী ট্রলি ও হুইল চেয়ার নিয়ে রোগী রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে হাসপাতালে আগত রোগী এবং ভিজিটারদের জন্য রয়েছে নানা উপদেশ-পরামর্শ। যেসব রোগী অবজারভেশনে থাকে তাদের জন্য দেয়া হয়েছে আইসিইউর মতো নতুন বেড, ওষুধ রাখতে দেয়া হয়েছে মেডিসিন কেবিনেট। মেডিসিন ট্রলিতে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন রোগের ওষুধ, যা এর আগে চোখে পড়েনি।
ক্যাজুয়ালটি বিভাগেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। করা হয়েছে সুসজ্জিত ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার। অথচ গত ৩০ বছরে এ বিভাগে কোনো বড় ধরনের অপারেশন হয়নি। বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন হচ্ছে। রোগীর সংখ্যাও বেশি। প্রতিদিন বহির্বিভাগে হাজারের অধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। আর তাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ব্লকে পা ফেললে মনে হবে আলাদা কোথাও আসা হয়েছে। সুসজ্জিত চারপাশ। এ বিষয়ে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ইনচার্জ নার্স শারমিন আক্তার জানান, দীর্ঘ অনেক বছর এ বিভাগে কাজ করছি। এমন পরিবর্তন হবে তা ভাবতেও পারিনি। আধুনিক এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান নতুন মেশিন দেয়া হয়েছে। মূল্যবান ওষুধগুলোও হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। খাবারের মান উন্নত করা হয়েছে। হাসপাতালের কার্যক্রম দ্রুত ও ত্বরান্বিত করতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওয়াকিটকি সেট দেয়া হয়েছে। ৬৪টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো হাসপাতালের চিত্র পরিচালক নিজে মনিটরিং করছেন। পাশাপাশি রোগীদের নিয়ে যে ধরনের অবৈধ বাণিজ্য হতো, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বর্তমান হালচাল সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, ঐতিহ্যবাহী মিটফোর্ড হাসপাতাল শুধু পুরান ঢাকার মানুষ নয়, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ভরসার জায়গা। তারা অনেক আশা-প্রত্যাশা নিয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাই মন্ত্রণালয়ের দেয়া বাজেটের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।