নিউজ ডেস্কঃ
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল পশ্চিমা পর্যটকদের সমালোচনা করে বলেছেন, তাদের মধ্যে যারা মাস্ক পরতে চায় না, জনগণকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে ফেলার কারণে তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়া উচিত। পশ্চিমা পর্যটকদের অবজ্ঞা করে তার এ মন্তব্য বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অবশ্য তার এ মন্তব্যের জন্য পরে ক্ষমা চেয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিষয়ে সচেতন করতে জনগণের মাঝে মাস্ক বিতরণকালে ব্যাংককে শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
চীনে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় দেশটি থেকে থাইল্যান্ডে পর্যটক আসার সংখ্যা কমে গেছে। এতে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছে থাইল্যান্ডের পর্যটনখাত। দেশটির জিডিপির ১৮ শতাংশই আসে পর্যটনখাত থেকে আর পর্যটকদের এক-চতুর্থাংশই আসে চীন থেকে। এই অবস্থায় থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন মন্তব্য বেরিয়ে এল।
ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তারপর থেকেই চীনের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। চীনসহ ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে।
দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩০ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে একদিনেই নতুন করে আরও ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত ২৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের জন্য নয়জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। এ রোগের থাবা থেকে বাঁচতে থাইল্যান্ডের গণপরিবহন ও শপিং সেন্টারগুলোতে অধিকাংশ মানুষকে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে।
তবে দেশটিতে এখনও মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে প্রচারাভিযান চলছে। শুক্রবার মাস্ক বিতরণকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেন, ফারাং পর্যটকরা মাস্ক ব্যবহার করেন এবং তাদের আচরণ দেখে মনে হয় তারা এটাকে অগ্রাহ্য করছে। এ সময় একগুচ্ছ মাস্ক বাতাসে নেড়ে তিনি বলেন, এ ধরনের লোকদের থাইল্যান্ড থেকে বের করে দেয়া উচিত।
থাইল্যান্ডে ফারাং শব্দটি পশ্চিমাদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং কারও প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করতেও এই শব্দকে ব্যবহার করেন তারা।
পরে বিতর্কিত এ মন্তব্যের জন্য তার ফেসবুকে পেজে পোস্ট দিয়ে ক্ষমা চান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এতে তিনি বলেন, মাস্ক ক্যাম্পইনের সময় ইউরোপ থেকে আসা কিছু বিদেশি অসহযোগিতামূলক আচরণ করলে আমি মেজাজ হারিয়ে এ মন্তব্য করেছিলাম।
গত বছর দেশটিতে এক কোটিরও বেশি চীনা নাগরিক থাইল্যান্ড ভ্রমণে আসেন। তবে ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় চলতি বছর চীনা পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ছোঁয়াচে এ রোগ থেকে বাঁচতে দেশটিতে বেড়ে গেছে মাস্ক ব্যবহারের পরিমাণ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাজনিত কোনো রোগ খাকলে কিংবা রোগীর সেবা দেয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার থাইল্যান্ড অফিস ৪ ফেব্রুয়ারি একটি গ্রাফিক টুইট করে জানিয়েছে, যারা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাজনিত কোনো রোগ আক্রান্ত নন তাদের মাস্ক ব্যবহার করার দরকার নেই। তবে নিয়মিত হাত ধৌত করা ও হাত দিয়ে মুখমণ্ডল স্পর্শ না করতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।