নিউজ ডেস্ক:
মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার খোলার ঘোষণা আসতে পারে যেকোনো সময়। জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা এমনটিই মনে করছেন। তবে এর আগে দুই দেশের মধ্যে এমওইউ চুক্তি নবায়ন হতে হবে।
এ দিকে এবারো কি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই কর্মী যাবে না সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ অন্যান্য দেশের মতো সাধারণ প্রক্রিয়ায় বিদেশে কর্মী যাবে সেটি নির্ধারণে নেপথ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী গ্রুপও রয়েছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার হচ্ছে সৌদি আরব। বন্ধুপ্রতিম এই দেশটিতে প্রতি বছর মোট জনশক্তির অর্ধেকেরও বেশি কর্মী যায়। ভয়াবহ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে নিয়ম মেনে কর্মী নিয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক গেছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ৩২ জন। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই পাড়ি জমিয়েছে দুই লাখ ৯৮ হাজার ২৯০ জন শ্রমিক। অপর দিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে গেছে মাত্র ১৮ জন। অথচ ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকেই ৮ লাখের মতো কর্মী গিয়েছিল, যা এখনো রেকর্ড হয়ে আছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহিদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবেই বাংলাদেশ থেকে বেশি শ্রমিক যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব হচ্ছে মুসলিম দেশ। এই দুই দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য আমাদের শ্রমিকদের মধ্যেও সবসময় একটা ভিন্ন আকর্ষণ থাকে। এটাই অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করছেন।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যেও কিন্তু আমাদের এখান থেকে শ্রমিক নিয়েছে বন্ধুপ্রতিম দেশ সৌদি আরব। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার কবে নাগাদ খুলছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবকিছু পজিটিভভাবে এগোচ্ছে। আশা করছি, ভালো খবর আসবে। এখন গায়ে হলুদ চলছে বলতে পারেন। তাহলে এমওইউ চুক্তি কবে নাগাদ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের মন্ত্রীই বলবেন।
গতকাল রাতে গ্রিনল্যান্ড ওভারসিসের স্বত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত ওপেনলি না খুলে দেয়ার ঘোষণা দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের গায়ে হলুদ চলতে থাকবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে আগের এমওইউ চুক্তিটি আগে আপগ্রেডিং হতে হবে। সেটি না হওয়া পর্যন্ত লোকপাঠানোর কার্যক্রম আমরা শুরু করতে পারব না।
এ প্রসঙ্গে অভিবাসন বিশ্লেষক জয়নাল আবেদিন জাফর গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার শুরু করতে যে এমওইউ চুক্তি নবায়ন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে সেটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি ৯০ শতাংশ আশাবাদী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার যে প্রক্রিয়ায় শ্রমিক যাবে সেখানে ১/২টি এজেন্সি ফ্রি রিক্রুটমেন্টের (বিনা খরচে) সুযোগ পেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে ওই দুটি রিক্রুটিং এজেন্সি কোনগুলো, তা তিনি জানাতে পারেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশনকে চিঠি দেয়। এরপর থেকে অনেক কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর পরও অদ্যাবধি শ্রমবাজার খোলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে ইতোমধ্যে জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে এখনো নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। এখন কোন গ্রুপ সফল হয় সেটি সময়ই বলে দেবে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।