নিউজ ডেস্ক:
‘আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকা আসার পর শুরুতে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখে এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে কু প্রস্তাব দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই।’
বিয়ে করব, করছি- এমন আশ্বাস দিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন বলে তার বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ তুলেছেন জান্নাত আরা ঝর্ণা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় সকালে এসে নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেন ঝর্ণা, যিনি গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে মামুনুলের সঙ্গে স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন।
মামলায় বাদী জানান, অসহায়ত্বের সুযোগে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত দুই বছর ধরে ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নামে দৈহিক মেলামেশা করতেন হেফাজত নেতা মামুনুল।
সাবেক স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের পরিচয় হয় জানিয়ে বাদী এজাহারে বলেন, ‘পরিচয়ের পূর্বে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ঘরে দুজন সন্তান জন্মলাভ করে।
‘স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুল হকের অবাধ যাতায়াত থাকার সুবাদে পরিচয়ের শুরু থেকেই আমার ওপর তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। যার ফলে আমাদের ছোটখাটো সাংসারিক মতানৈক্যের মধ্যে সে সুকৌশলে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকে। মামুনুল হকের কুমন্ত্রণায় আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে।
বাদী জানান, সাংসারিক টানা পোড়েনের এক পর্যায়ে মামুনুল হকের ‘কু পরামর্শে’ ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তিনি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অসহায় হয়ে পড়েন।
‘অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে সু-কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য প্ররোচিত করে। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকা আসার পর শুরুতে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখে এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে কু প্রস্তাব দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই।
‘এক পর্যায়ে সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গত দুই বছর যাবৎ আমাকে বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রীযাপন ও বিবাহের আশ্বাস দিয়ে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করে। এক পর্যায়ে আমি বিবাহের কথা বললে সে আমাকে বিবাহ করব, করছি বলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে।’
বাদী আরও বলেন, ‘সবশেষ গত ০৩ এপ্রিল আমাকে ঘোরাঘুরির কথা বলে বেলা অনুমান ১৫.১৫ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত রয়েল রিসোর্টের ৫ম তলার ৫০১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসে। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখাইয়া আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।’
এর পরের ঘটনা তুলে ধরে বাদী জানান, স্থানীয় জনগণ রিসোর্টে তাদের আটক করে এবং পরিচয় জানতে চায়। কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়তে হয়। পরবর্তীতে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
‘ঐ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং মামুনুল হক আমাকে আমার ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় আমাকে অবৈধভাবে জোরপূর্বক আটকে রাখে। উক্ত বাসায় আটক থাকাকালে আমাকে আমার পরিবার (সন্তান, বাবা-মা) সহ সকল আত্নীয় স্বজনদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি…।
‘পরবর্তীতে ২৭ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে আনার পর জানতে পারি যে, আমার বাবা গত ২৬ এপ্রিল কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে আমার বাবার জিম্মায় প্রদান করে। পরবর্তীতে মামুনুল হকের অনুসারীদের হুমকি ও ভয়ভীতি এবং আমার পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’
এ ঘটনায় এজাহারে মামুনুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আকুতি জানিয়েছেন বাদী।