নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি :
প্রাণঘাতী করোনার আতঙ্কে সারাবিশ্বসহ দেশবাসী আতঙ্কিত। করোনার সতর্কতায় ঘর বন্দি সকল পেশাজীবি মানুষ। সরকারী অনুদানসহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এবং সরকারী-বেসরকারী কর্মজীবিরা ও স্থানীয় ধণাঢ্য ব্যক্তিরা হতদরিদ্র, অসহায় দিন মজুরদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সমাগ্রী তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু স্বল্প বেতনের চাকরী করা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন, এমনটিই বলছেন দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অসহায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
হিলি ড্রীমল্যান্ড স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইদ আবু হাসনাত জানান, আমরা বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। আমরা স্বল্প বেতনে চাকরী করি। মাসে মাত্র কয়েক হাজার টাকা বেতন পাই। এইটুকু বেতন দিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কোন রকম কষ্ট করে পরিবার পরিজনদের নিয়ে চলি। করোনার সতর্কতায় সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলও বন্ধ, ঐ সামান্য বেতনটুকুও পাচ্ছি না এবং আমাদের আয়ের কোন উৎস নেই।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আজিজ ও লুৎফর রহমান জানায়, ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আমরা শিক্ষককতা করি। এবং এর ফাঁকে টিউশনি করে যা পাই তা নিয়ে কোন রকম চলি। করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। কবে স্কুল খুলবে তারপর অভিভাবকের নিকট হতে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন নিবে,তবেই আমাদের বেতন দিবে। এতোদিন আমরা কিভাবে চলবো। আমাদের তো বাড়তি কোন উপার্জন নেই। আমরা সাহায্য চাইতেও পারছিনা।
হিলি ড্রীমল্যান্ড স্কুলের পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, করোনার সতর্কতায় স্কুল বন্ধ রয়েছে। এই কারণে ছাত্র-ছাত্রী আসে না। এটা তো একটা পাবলিক স্কুল। ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন দিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দিয়ে থাকি। অভিভাবকরাও টাকা দিচ্ছে না,তাদেরও সামান্য বেতনটুকুও দিতে পারছিনা। আজ আমার স্কুলের প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিনি তার ফেসবুক আইডিতে ষ্ট্রেটাস দিয়েছে ”কিন্ডারগার্টেন ( শিশু মনের বিকাশ সাধক বিদ্যালয়) স্কুলগুলোর শিক্ষকগনের মানবেতর জীবনযাপন। তাঁদের কথা কি একটু আমরা ভাবতে পারি?
হাকিমপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ এইচ এম আউলাদ মন্ডল বলেন, আমরা তো অন্যের উপরে নির্ভরশীল। করোনার কারনে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা কোন বেতন দেয়নি। তাই আমিও আমার স্কুলের ১৫ জন শিক্ষকদের বেতন দিতে পারিনি। তারা মাত্র কয়েক হাজার টাকা বেতন পায়।
তিনি আরও বলেন, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ মিলকারখানা ও গার্মেন্টস শ্রমিকরাও বেতন পেয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছিনা।
বোয়ালদাড় ইউপি চেয়ারম্যান মেফতাউল জান্নাত বলেন, তার ইউনিয়নে হাহাকার শুরু হয়েছে। ৩-৪ হাজার পরিবার একেবারে অসহায় তার মধ্যে তাকে ৩শ জনের জন্য ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু আর লবণ হাফ কেজি দেওয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
হাকিমপুর (হিলি) পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, যাদের ঘরে ভাত নেই, অসহায় দিনমজুর শুধু তাদের জন্যই খাদ্যসমাগ্রী সরকারী ভাবে বরাদ্দ এসেছে। তবে পরবর্তীতে যদি সরকারী কোন নির্দেশ আসে তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রাফিউল আলম জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকদের জন্য সরকারী কোন বরাদ্দ আসে নাই। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের জন্য। ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু আর লবণ হাফ কেজি দেওয়া হচ্ছে।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুনের নিকট অসহায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষদের সহযোগিতার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, চাকরীজীবীদের জন্য সরকারী কোন অনুদান আসেনি। তবে এইসব স্কুলের শিক্ষকরা স্বল্প বেতন পেয়ে থাকে। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি আলোচনা করবো এবং তাদের পাশে দাড়াবো।