নিজস্ব প্রতিবেদক:
মানবিক কাজে বছর পার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। করোনা মহামারিতে সহকর্মী-স্বজনরা মারা গেলেও সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি করোনায় বিপদগ্রস্ত, গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অসহায় মানুষদের বাড়িতে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়া ও রমজান মাসে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেছেন দেশব্যাপী।
একইভাবে করোনায় আক্রান্তদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, চিকিত্সা, ওষুধ-পথ্যের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে সচেতন করা, কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি করা, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ সত্কারে সহায়তার কাজ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
শুরুতে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে অনীহা ছিল। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করে তোলে সেনাবাহিনী। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬২ জেলায় করোনা মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে সেনাবাহিনী। তারা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান করে মাইকিংয়ের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি ‘সামাজিক দূরত্ব’ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় জীবাণুনাশক পানি স্প্রে, বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে আরো বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এ কাজে সারা দেশে নিয়োজিত ছিলেন ৩ হাজারের বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। করোনা মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় টহল জোরদার, জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার ও দুস্থদের ত্রাণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। অসহায় মানুষের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রীও পৌঁছে দেয় সেনাবাহিনী। একইভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তাদের ঘাঁটির নিকটবর্তী স্থানগুলোতে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে। বিমান বাহিনীর সদস্যরা বিমানযোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত এমপি, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে চিকিত্সার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসেন। তাদের এই সেবা বর্তমানেও অব্যাহত আছে।
চলতি বছর করোনাকালে সারা দেশে পুলিশের সামাজিক দায়বদ্ধতা বা মানবিকতার টুকরো টুকরো অনেক ঘটনা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ঢাকার ধামরাইয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান পাখি মণ্ডল। কিন্তু তার মৃতদেহের কাছে কোনো স্বজন আসেননি। মৃতদেহ পড়ে ছিল। পরে ধামরাই থানাপুলিশের সহায়তায় কায়েতপাড়া শ্মশানে তার সত্কার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মধ্যরাতে এক করোনা রোগীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন বাড়িওয়ালা। গভীর রাতে পুলিশ তাকে বাড়িতে তুলে দিয়ে আসে। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে সাভারের আশরাফুজ্জামানকে একা ফেলে বাসা থেকে চলে যান তার স্ত্রী ও সন্তান। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান তাকে দেখাশোনার বন্দোবস্ত করে দেন। এছাড়া গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভ মণ্ডল নিজের জন্মদিনে অসহায় পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন। সব মিলিয়ে এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে করোনার এই দুর্যোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক নতুন মানবিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে।
যাদের হারিয়েছি :এ পর্যন্ত করোনায় ৮১ জন পুলিশ ও পাঁচ জন র্যাব সদস্য মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৮০২ জন পুলিশ ও ২ হাজার ৪৯৬ জন র্যাব সদস্য। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ১৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জন সামরিক সদস্য এবং ১৭৯ জন অবসরপ্রাপ্ত। এছাড়া দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ১৫ হাজার ৯০২ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ জুলাই রাতে মারা যান সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ মারা যান গত ২৫ জুলাই। এছাড়া গত ১৩ জুলাই ভোরে মারা গেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর গোয়েন্দা (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান।