নিউজ ডেস্ক:
কেবল ভারী অস্ত্র বহন, পরিচালনা কিংবা কঠোরতায় নয়, মানবিক সহায়তায় অনন্য ভূমিকা রাখছে সশস্ত্র বাহিনী। মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দুর্গম পাহাড়ে কিংবা উপকূল-সমতলে সবখানেই অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসহ নানা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। জানা গেছে, করোনা মোকাবিলা ও মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে রোববারও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ির নয়াবাজার ও ইন্দ্রসিংপাড়ায় দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী কাঁধে বয়ে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন সেনা সদস্যরা। এ ছাড়া রোববার সাভার এলাকায় অসহায়দের মধ্যে খাদ্যসহ নানা সামগ্রী বিতরণ করেছে সেনাবহিনী। অন্যদিকে রোববার খুলনা, মোংলা ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় দুস্থ মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে নৌবাহিনী। একইভাবে রোববার কক্সবাজারের বিমানবাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনার কর্মকর্তারা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার ২৮৫ জন এতিম ও দুস্থ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ সময়ের আলোকে জানান, করোনা মোকাবিলা ও লকডাউনের কারণে অসহায়-দুস্থ মানুষের মধ্যে মানবিক সেবার অংশ হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি চলমান রেখেছে সশস্ত্র বাহিনী। করোনা মহামারি শুরুর প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ কার্যক্রম থেকে শুরু করে অসহায়দের মধ্যে মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী। সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমানবাহিনী প্রধানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নিজ নিজ বাহিনীর এসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এমনকি করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা ও হেলিকপ্টারে করে বহনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজটিও করেছে সশস্ত্র বাহিনী। ভূখণ্ড সমুন্নত রাখার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আর্তমানবতার সেবায় সর্বচ্চোভাবে কাজ করে যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। এই মানবিকতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, বেশকিছু দিন ধরেই সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে বিভিন্ন স্থানে করোনা মহামারিতে অসহায় ও দুস্থ মানুষদের মধ্যে খাদ্য ও নানা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। গত বছরও করোনা শুরুর পর এমনিভাবে মানবিকতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছিল সশস্ত্র বাহিনী। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে ফের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও কক্সবাজারে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর তাদের পাশেও খাদ্যসহ নানা ধরনের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এভাবেই বিভিন্ন দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়ে মানবিক কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে সশস্ত্র বাহিনী।
লক্ষ্মীছড়িতে সেনাবাহিনীর ত্রাণ বিতরণ : আইএসপিআর জানায়, খাগড়াছড়ির গুঁইমারা রিজিয়নের আওতাধীন লক্ষ্মীছড়ি জোন কর্তৃক চলমান সপ্তাহব্যাপী ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রোববারও লক্ষ্মীছড়ি জোনের ইন্দ্রসিংপাড়া ও নয়াবাজার ক্যাম্পের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, আটা, লবণ ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন লক্ষ্মীছড়ি জোনের সদস্যরা। দুর্গম ইন্দ্রসিংপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা সকালে টহল নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় পরিবারগুলোর দোরগোড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী তুলে দেন। এ ছাড়াও নয়াবাজার ক্যাম্পের সদস্যরা ক্যাম্প এলাকার বেশ কিছু অসহায় পরিবারের কাছে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেন। এ সময় ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান সৌরভ বলেন, করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুরু থেকেই বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে আছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
সাভারে ত্রাণ বিতরণ : চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নির্দেশে বরাবরের মতো অসহায় ও দুস্থ মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই অংশ হিসেবে রোববার সাভার সেনানিবাস সংলগ্ন বমকা এবং পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় সর্বমোট ৩৬৫টি পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, চিনি, তেল, আটা, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, সাবান ও লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
দুস্থ মানুষের পাশে নৌবাহিনী : করোনা মোকাবিলায় দেশব্যাপী অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য নৌবাহিনীর মানবিক সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রোববার খুলনা নেভাল এরিয়া কমান্ডারের তত্ত্বাবধানে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ও খুলনা শহর এলাকায় দুস্থ ও অসহায় ৬০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে খুলনার লবণচরায় নৌঘাঁটি সোলাম কর্তৃক লবণচরা এলাকায় ৩০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে অনুরূপ খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া দেশব্যাপী মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্টের তত্ত্বাবধানে বাগেরহাট জেলার জয়মণি জেলেপাড়া ও মোংলা তৎসংলগ্ন এলাকায় ৩৩০ কর্মহীন ও ছিন্নমুল পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বানৌজা মোংলা কর্তৃক মোংলা ফেরিঘাট, বুড়িরডাঙ্গা ও চাঁদপাই এলাকায় ২০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নৌবাহিনী ঘাঁটি শের-ই-বাংলা কর্তৃক লালুয়া ইউনিয়নের দুস্থ ও অসহায় ২০০ পরিবারের মধ্যে অনুরূপ খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়। সহায়তা হিসেবে প্রতিটি পরিবারকে ১০ দিনের চাল, ডাল, তেল, আটা, ছোলা, লবণ, সেমাই, চিনি ও নগদ অর্থসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়।
বিমানবাহিনীর মানবিক সহায়তা : মানবিক দায়িত্ববোধের অংশ হিসেবে রোববার কক্সবাজারের বিমানবাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা কর্তৃক বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার ২৮৫ জন এতিম ও দুস্থ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ঈদ উপহার হিসেবে পাঞ্জাবি, পাজামা, টুপি ও থ্রি পিসসহ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বিমানবাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনার এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ শাফকাত আলী ও ঘাঁটির অন্যান্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এতিম ও দুস্থ শিশুদের মধ্যে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ওই ঈদ উপহার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ ছাড়াও বিমানবাহিনী ঘাঁটি পাহাড়কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল কর্তৃক বিএএফ শাহীন কলেজ প্রাঙ্গণে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন মাদ্রাসার ১২৬ জন এতিম ও দুস্থ শিশুর মধ্যে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ঈদ উপহার হিসেবে পাঞ্জাবি ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ঈদ উপহার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় বিমানবাহিনী ঘাঁটি পাহাড়কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইলের এয়ার অধিনায়ক এয়ার কমডোর কাজী মাজহারুল করিমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।